বাইরের রাজনৈতিক ‘মাতব্বর’ বলতে কাকে ইঙ্গিত

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল), এনসিপি। ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টাদের ঘিরে চলমান আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন এনসিপির দক্ষিাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি ‘বাইরের রাজনৈতিক মাতব্বর’ প্রসঙ্গে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেন বাইরের কাউকে রাজনৈতিক মাতব্বরি করার সুযোগ দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে না ফেলি।’

এনসিপিকে নির্বাচনবিরোধী হিসেবে চিত্রায়িত করার ‘সচেতন প্রচেষ্টা’র অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, এনসিপিকে কলঙ্কিত করতে একটি মহল সচেতনভাবে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। ছাত্র উপদেষ্টাদের দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকতে চায়—এমন গুজব ছড়িয়ে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করাও এর অংশ। তিনি বলেন, ‘এই চক্রান্ত কয়েকটি দিক থেকে পরিচালিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন: অথচ এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে দলের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন। ২১ মে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত যে সময় দিয়েছেন, আমরা সেটিকে সমর্থন করেছি। এর মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে আমরা এর মধ্যে বিচার ও সংস্কারের কথা বলেছি।’’

হাসনাত আব্দুল্লাহ এটাও উল্লেখ করেছেন যে, ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও ১০ মে বলেছিলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই।” একাধিকবার তিনি একই বক্তব্য দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে হাসনাত প্রশ্ন তোলেন, ‘এই অবস্থানের পরও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অবচেতন মনে আর্মিকে রাজনৈতিক সালিশের ক্ষমতা দিয়ে দেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’

অথচ বিএনপিই সেনা হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছিল উল্লেখ করে এনসিপি নেতা ওয়ান-ইলেভেনের সময় তারেক রহমানের ওপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা সতর্ক পাহারাদার। দেশের প্রয়োজনে, সার্বভৌমত্বের প্রয়োজনে, আমরা প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। কিন্তু গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে ২০২৪-এর অভ্যুত্থান ঘটেছে, সেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে আমরা মেনে নেব না। রাজনৈতিক সালিশের সুযোগ দিয়ে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের পথ কেউ প্রশস্ত করছে কি না—তা নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যেসব দল পাশে ছিল, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতেও সব পক্ষকে এক থাকতে হবে। এই দাবিতে বড় কোনো দলের নির্লিপ্ততা আমাদের হতাশ করে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা, আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচনে যাওয়ার লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। ক্ষণস্থায়ী ফায়দা লুটতে গিয়ে ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বিপুল সম্ভাবনার জনআকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করা হলে, তা হবে একটি ঐতিহাসিক ব্যর্থতা।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। ফাইল ছবি

এর আগে ইশরাক হোসেনের মামলার উল্লেখ না করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম  লিখেছেন, ‘মব তৈরি করে যদি হাইকোর্টের রায় নেওয়া যায় তাহলে এই হাইকোর্টের দরকার কি?”

পরের পোস্টে সারজিস আলম অভিযোগ করেন, দেশে বিচার প্রক্রিয়ায় পক্ষপাত স্পষ্ট। তার ভাষায়, ‘টাকা আর রাজনৈতিক দলের সুপারিশে অনেক হত্যাকারী আওয়ামী লীগারের জামিন হয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী আমলে জুলুমের শিকার মজলুমদের জামিন হয় না, কারণ তাদের পেছনে টাকা বা প্রভাব নেই।’

তিনি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘হেফাজতের বহু আলেম এখনো আদালতের চক্করে ঘুরছেন, অনেকে কারাগারে। অথচ বিএনপির আমলে অপরাধ করে জেলে যাওয়া দাগী আসামিরাও এখন জামিন পাচ্ছেন।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। ফাইল ছবি

সারজিস প্রশ্ন তোলেন, ‘এই জামিন কাদের সুপারিশে হচ্ছে? কোন আইনজীবী বা বিচারকের সহায়তায় তা সম্ভব হচ্ছে?’

তিনি বলেন: প্রকাশ্যে হাসিনার নির্দেশে এত রক্ত ঝরলো, অথচ নয় মাসেও একটি খুনের বিচারও হলো না!

‘এই দায় কি আসিফ নজরুল স্যার এড়াতে পারেন? তাহলে কি এখন আমাদের তার পদত্যাগ চাওয়া উচিত নয়?’ উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *