কুষ্টিয়ার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ

টাইমস ন্যাশনাল
4 Min Read
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কালিগঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। ছবি: কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
Highlights
  • ‘জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নেওয়া একটি বড় অপরাধ। প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কালিগঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওহিদ-উজ-জামান ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সামছুজ্জামান মুকুল (কৃষি শিক্ষা) ও মোছা. মুসলিমা খাতুনের (সমাজবিজ্ঞান) বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির এ অভিযোগ তুলেছেন।

তিনি ২০ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও এ পর্যন্ত জালিয়াতির বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে লিখিত অভিযোগের সূত্র অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওহিদ-উজ-জামান বলেন, ‘তিনি ২০১৬ সালে এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের আগেই ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে সহকারী শিক্ষক পদে মোছা. মুসলিমা খাতুন নিয়োগ নেন। আর ২০০৩ সালের ১২ মার্চ স্থানীয় দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা পত্রিকায় জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ নেন মো. সামছুজ্জামান মুকুল। এমনকি তাদের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে সুপারিশকারী বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি, প্রধান শিক্ষক এবং কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যদের সই-সিল জাল করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) তারা ২০১৬ সালে বিদ্যালয়ে যোগদান করার তথ্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে এই দুই শিক্ষক নিয়মিত বেতন ভাতা তুলছেন। সম্প্রতি এই দু’জন বিদ্যালয়ের অনুমতি এবং ছুটি ছাড়াই আমার সই জাল করে বিএড ডিগ্রি নিয়েছেন। পরে সেই ডিগ্রির ভিত্তিতে বেতন স্কেলের জন্য আমার কাছে আবেদন করেন। কিন্তু নিয়ম বহির্ভূত আবেদন গ্রহণ না করায় তারা আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন এবং আদালতে মামলা করেছেন। তাই তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির প্রত্যাশায় যথাযথ স্থানে লিখিত অভিযোগ করেছি।’

জানা গেছে, উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের নগর সাঁওতা পাহাড়পুর এলাকায় ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কালিগঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। ২০২২ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়টি সরকারি এমপিওভুক্ত হয়।

অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ২০১৫ সালের ৬ অক্টোবর পত্রিকার সঙ্গে কালিগঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কাটিং লাগানো। তবে কাটিং বিজ্ঞপ্তির অক্ষরের সঙ্গে সমকালে প্রকাশিত অক্ষরের সামঞ্জস্য নেই। আবার ওই তারিখে প্রকাশিত ই-পেপারে বিদ্যালয়ের কোনো বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এই ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সহকারী শিক্ষক পদে মুসলিমা খাতুনের নিয়োগে প্রধান শিক্ষক দেখানো হয়েছে মো. সাইফ উদ্দিন ফরিদকে। যিনি ২০১৫ সালের আগেই এ পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া কিয়েটে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একইভাবে স্থানীয় দৈনিক বাংলাদেশ বার্তায় জালিয়াতি করে নিয়োগ দেখানো হয়েছে মো.সামছুজ্জামান মুকুলকে।

সরেজমিন দেখা যায়, কুষ্টিয়া পুরাতন কাটাইখানা মোড়ে অবস্থিত কিয়েটে দাপ্তরিক কাজ করছেন মো.সাইফ উদ্দিন ফরিদ। নিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সময়ে বিদ্যালয়ে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মুকুল ও মুসলিমাকে আমি চিনি না। কোনো কিছু ঘটে থাকলে তা জালিয়াতি করা হয়েছে।’

অভিযুক্ত দুই শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও প্রক্রিয়া বৈধ না অবৈধ তা তাদের দেখার বিষয় নয়। এগুলো বুঝবে সভাপতি আর প্রধান শিক্ষক।’ শিক্ষা কর্মকর্তারা কয়েক দফা যাচাই বাছাই করেই এমপিওভুক্ত করেছেন বলেই তারা নিয়মিত বেতন তুলছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নেওয়া একটি বড় অপরাধ। প্রধান শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তৈয়ব মো. ইউনুস আলী বলেন, ‘যাচাই-বাছাই করে ভুয়া প্রমাণিত হলে, ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *