ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখলের একটি সামরিক পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে—এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর।
বিবিসির লাইভ নিউজে বলা হয়, নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, মন্ত্রিসভার সদস্যদের “সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ” অংশ বিশ্বাস করেন, বিকল্প কোনো পরিকল্পনায় হামাসকে পরাজিত করা যাবে না বা গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের উদ্ধার সম্ভব নয়।
এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জাতিসংঘ এরইমধ্যে সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারিত হলে ফিলিস্তিনিদের জন্য “বিপর্যয়কর পরিণতি” ডেকে আনতে পারে। একই সঙ্গে জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ইসরায়েলের ভেতরেও এই পরিকল্পনা নিয়ে চলছে তীব্র বিতর্ক। অনেক ইসরায়েলি, বিশেষ করে গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এ ধরনের সামরিক অভিযানে তাদের স্বজনদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সামরিক বাহিনী গাজা শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবে। যদিও যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহরটিতে এখনও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস করছেন।
এই দখল পরিকল্পনার পাশাপাশি মন্ত্রিসভা যুদ্ধ শেষ করার জন্য পাঁচটি মূলনীতি অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে একটি হলো—গাজা অঞ্চলে একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা, যা হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীন হবে না।
নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা গাজায় হামাসকে সরিয়ে দিতে চাই, গাজাবাসীকে মুক্ত করতে চাই এবং সেখানে এমন এক বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যারা ইসরায়েল ধ্বংসে বিশ্বাস করে না।’
তবে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গাজা শাসন করতে চাই না। আমরা সেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করতে চাই না। শুধু আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি বেষ্টনী তৈরি করতে চাই।’
ইসরায়েলি গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গাজা শহর দখলের এই পদক্ষেপ নেতানিয়াহুর সরকারকে আন্তর্জাতিক পরিসরে আরও একঘরে করে তুলবে।
নেতানিয়াহু সরকার বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাপের মুখেও রয়েছে। যুদ্ধ থামানো এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর পথ খুলে দেওয়ার দাবিতে দেশ-বিদেশে বিক্ষোভ চলছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ মাসের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১,১৫৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ।