ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলায় ৭০ হাজারের বেশি আধাপাকা ও কাঁচা ঘর, আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর।
বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ১০ লাখ মানুষ। ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও পরশুরাম উপজেলার গ্রামাঞ্চলে হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
বন্যার ফলে ৭ হাজার ৩৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের বাড়িতে। আর আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে আরও প্রায় এক হাজার পরিবার। অনেকে খোলা আকাশের নিচে প্লাস্টিকের ত্রিপল টানিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ফেনী সদর উপজেলায় ২৫৫টি আধাপাকা ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৭১ লাখ টাকার। এছাড়া পুরো জেলায় আরও অন্তত ৩ হাজার ৬০০টি আধাপাকা ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
কাঁচাঘরের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে ৮ হাজার ৯৫টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছাগলনাইয়ায়– ৫ হাজার ৭০টি। ফুলগাজীতে ধ্বংস হয়েছে ২০০টি, দাগনভূঞায় ৯৬০টি, পরশুরামে ৫৬৯টি, ফেনী সদরে ৬৯৬টি ও সোনাগাজীতে ৬০০টি ঘর। এসবের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
জেলায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা ঘরগুলোতে। সংখ্যা ৫৩ হাজার ৪৩৩টি। এর মধ্যে সোনাগাজীতে রয়েছে ৪১ হাজার ৩৫৫টি ঘর। এই একক উপজেলাতেই কাঁচা ঘরের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বেশি।
ছাগলনাইয়ার পশ্চিম এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, ‘বন্যার পানির প্রবল স্রোতে আমাদের পাকা ঘরের পেছনের দেয়াল ধসে পড়েছে। মেরামতে লাগবে প্রায় ৬ লাখ টাকা।’
একই উপজেলার মির্জানগর গ্রামের রাকিব হোসেন বলেন, ‘২০ আগস্ট রাতে হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ে। আমরা প্রতিবেশীর ছাদে আশ্রয় নিই। ঘরে থাকা মোটর, ফ্রিজ, খাট সব পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতি প্রায় এক লাখ টাকা।’
পরশুরামে জনশুমারি অনুযায়ী ২৫ হাজার ৯৩৭টি ঘরের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার ৭৮৭টি পরিবার। ফুলগাজী উপজেলায় মোট ২৮ হাজার ৪৭৫টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের সবাই বন্যার পানি বা স্রোতের ক্ষতির মুখে পড়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, ইউনিয়নগুলোর একাংশে এখনো পানি নামেনি, ফলে প্রায় এক হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। পুনর্বাসনের লক্ষ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই কার্যক্রম শুরু হবে।’
তিনি জানান, এবারের বন্যায় ফেনী জেলায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।