১৯৭১ রাজনীতির নির্ধারক নয়: নাহিদ

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
নাহিদ ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। ছবি: ফেসবুক পেজ
Highlights
  • ‘গণঅভ্যুত্থানের পর যে নতুন সূচনা হয়েছে তা একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে। মুজিববাদসহ অন্যান্য সব কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করে রাষ্ট্র ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা আমাদের দায়িত্ব।’

দেশের বর্তমান প্রজন্ম এরই মধ্যে ১৯৭১ সালকে পেছনে ফেলে অনেকটুকু এগিয়ে গেছে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন আর কেউ “৭১ এর পক্ষে” বা “৭১ এর বিপক্ষে” এই দ্বিধার ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি মেনে নিতে রাজি নয়। একাত্তর থাকবে ইতিহাসে, দেশের ভিত্তি হিসেবে, সম্মানের বিষয় হিসেবে। কিন্তু এটি আর দেশের রাজনীতিতে নির্ধারকের ভূমিকা নিতে পারবে না।’

শুক্রবার ’৭১ এবং ২৪’ শিরোনামে এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘১৯৪৭ সালের ক্ষেত্রেও একই নীতি প্রযোজ্য হবে। এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে সম্মান করা হবে কিন্তু রাজনৈতিক কারসাজির হাতিয়ার হিসেবে একে আর ব্যবহার করতে পারবে না কেউ।’

জুলাই অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৯৭১ ও ২০২৪ সালকে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ‘মব জাস্টিসে’ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও স্মারক ভাঙচুর হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের জোরাল ভূমিকা নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও এনসিপির সখ্যও হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। এমন আবহে নাহিদ ইসলাম এই বক্তব্য দিলেন।

বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এর সব স্মারক ম্যুরাল উপড়ে ফেলা হয়েছে। ছবি: সাদিক আল আশফাক/টাইমস

তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, ২৪ হলো ১৯৭১ এর ধারাবাহিকতা। একাত্তরের আকাঙ্ক্ষা, সমতা, মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে মুজিববাদ ’৭১ কে ভারতীয় ন্যারেটিভে দেখানোর চেষ্টা করেছিল, যার ফলে আপোস করতে হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। এটি ছিল কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ লড়াই। যা পরিচালিত হয়েছিল গণতান্ত্রিক ও সাম্যবাদের বাংলাদেশ অর্জনের আশায়।’

‘২০২৪ এর পর দেশের রাজনীতিতে নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছে। একটি নতুন প্রজন্মের মানুষ রাজনীতির মঞ্চে এসেছেন যারা ২৪ এর যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। আমরা ১৯৭১ সালকে পেরিয়ে ২০২৪ সালে এসে পৌঁছেছি। যারা এখন একাত্তরের পক্ষ বা বিপক্ষের রাজনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে চায় তারা আসলে দেশকে আবার পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোয় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়,’ যোগ করেন তিনি।

নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর যে নতুন সূচনা হয়েছে তা একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে। মুজিববাদসহ অন্যান্য সব কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করে রাষ্ট্র ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা আমাদের দায়িত্ব।’

তিনি আরো বলেন, ‘এর অর্থ এই নয় যে মানে এই নয় যে আমরা ’৭১ বা ’৪৭ নিয়ে আলোচনা করব না বা বিতর্ক হবে না; বরং এই নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসে অবশেষে আমরা আমাদের ইতিহাসের প্রশ্নগুলোর সুরাহা করব। এখন রাজনীতি হতে হবে ’২৪-এর মূল্যবোধের ভিত্তিতে।’

‘যারা এখনও ১৯৭১ সালে ফিরে যেতে চায়, তারা ২০২৪-এর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করছে,’ এমন মন্তব্যও করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে যে ২৪ কখনও প্রতিশোধের বিষয়ে ছিল না। যারা এটিকে প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তারা এই অভ্যুত্থানের আসল অর্থই বোঝেনি।’

 

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *