আষাঢ়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলেও শ্রাবণের শেষ সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে স্বস্তিতে আমন রোপণ করতে পারছেন গাইবান্ধার কৃষকরা। আমন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিপাকে ছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ভাল বৃষ্টি হওয়ায় আমন ক্ষেতে প্রাণ ফিরেছে। জমিতে কৃষকদের বাড়তি সেচ দিতে হচ্ছে না। বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে পাট জাগের দুশ্চিন্তারও অবসান ঘটেছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড হয়েছে। গত দু’দিনে এ সপ্তাহের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, রংপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১০ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিনও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে ভারী অথবা মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি বর্ষণ হতে পারে।
সদর উপজেলার বোয়ালীর শফিকুল ইসলাম ( ৪২) বলেন, ‘শুরুতে সেচ দিয়ে জমি চাষ করে, বৃষ্টির পর ধান লাগানো হয়েছে। বৃষ্টিটা কয়েকদিন আগে হলেই বাড়তি খরচ হতো না।’
পলাশবাড়ীর মনোহরপুরে কুমারগ্রামের সবুর হোসেন খন্দকার (৫০) জানান, ভরা বর্ষায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায়, চাষিদের সেচ বাবদ বাড়তি খরচ হয়েছে। তবে গত কয়েকদিন থেকে থেমে থেমে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। জমিতেও পানি জমায় কৃষকরা চিন্তামুক্ত হয়েছেন।

একই গ্রামের সাদা মিয়া (৪৫) বলেন, ‘সাধারণত আষাঢ়ের মাঝামাঝি আমন রোপণ করে থাকি। কিন্তু এবার আষাঢ়ে বৃষ্টি না থাকায় রোপণ করা যায়নি। এখন বৃষ্টিতে চারা লাগালে ভাল ফলনও পাব। গত বছরও এমন সময়ে ধান রোপণ করে ভাল ফলন পেয়েছি।’
পশ্চিম ফকিরপাড়ার রিমন খন্দকার (৩২) বলেন, ‘পানির অভাবে আমন রোপণ ছাড়াও পাট জাগ দেওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল। পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পেরে অনেক চাষির পাট জমিতেই শুকিয়ে যাচ্ছিল।’
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছিল। ইতোমধ্যে কৃষকরা সেচযন্ত্র চালু করে জেলায় ৬০ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ শেষ করেছে। এ ছাড়া জেলায় ১৩ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এসব জমি থেকে পাট উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৬৬৯ টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, অনেক চাষিদের বীজতলায় বীজ পেকে যাওয়ায়, তারা বৃষ্টির অপেক্ষা না করে আগেই সেচযন্ত্র দিয়ে আমন রোপন শুরু করেছেন। এখন ভারী বৃষ্টিতে জলাশয়গুলো পরিপূর্ণ। কৃষকরা এখন আগস্ট মাসের ১০-১৫ দিনের মধ্যে আমন লাগাবেন। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্তও আমন রোপণ করা যাবে।