ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় ভোর রাতে যখন বানের পানি প্রবেশ করে, তখন অধিকাংশ গ্রামবাসী ছিলেন গভীর ঘুমে। বাঁধের ফাটল ভেঙে পানি প্রবল স্রোতের শব্দে ঘুম ছুটে যায় সকলের। নিমিষেই পানির নিচে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, ক্ষেত-খামার ও শত শত স্বপ্ন সুখ। সেই থেকে গত কয়েকদিনে ফুলগাজীর ৮৫ গ্রামের বাসিন্দার চোখে ঘুম নেই।
‘আমরা কিছুই বাঁচাতে পারিনি,’ শুক্রবার সকালে টাইমস অব বাংলাদেশকে বললেন ৩৮ বছর বয়সী মান্নান মিয়া। ‘পানি উঠছিল বুক পর্যন্ত, বুঝতেই পারলাম না কী হইতেছে’, বলেন তিনি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে ফুলগাজীতে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৮৫টি গ্রাম। পাশাপাশি ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরে আরও হাজার হাজার মানুষ বন্যা আক্রান্ত। অধিকাংশ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। ফেনীর মূল সড়কও এখন কয়েক ফুট পানি নিচে। ফেনী, মুহুরি, কহুয়া ও সেলোনিয়া নদীর বাঁধ অন্তত ২০ জায়গায় ভেঙে পড়ায় তলিয়ে গেছে বিস্তৃর্ণ অঞ্চল।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ২০ হাজার মানুষ জরুরি আশ্রয়ে কেন্দ্রে আছেন।
তবে বাসিন্দারা জানান, প্রকৃত বানভাসীর সংখ্যা অনেক বেশি। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে ধীরগতিতে চলছে। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে পানীয় জল, ওষুধ ও খাবারের সংকট রয়েছে।
‘আমরা এক মুঠ চাল, আর বৃষ্টির পানি খাইয়া বাঁইচা আছি,’ অব্যক্ত বেদনায় বললেন কৃষক আব্দুর রহিম। এরই মধ্যে তার বাড়ি ও মাছের পুকুর তলিয়েছে বন্যায়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন ত্রাণ তৎপরতায় নেমেছে। বন্যাদুর্গতদের শুকনো খাবার দিচ্ছে তারা।

সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে, আশ্রয় কেন্দ্র ঘিরে মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন শুকনো খাবারের প্যাকেটের আশায়।
‘জীবনে দ্বিতীয়বার আমরা বানভাসী হইছি” বললেন ত্রাণের লাইনে দাঁড়ানো গৃহবধু শেফালী আক্তার, ক্রমেই যেন তার কণ্ঠস্বর ফিকে হয়ে আসে।
এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভারী বৃষ্টিপাত পরিস্থিতিতে বন্যার আরো অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর ফুলগাজীর অপেক্ষা, শুধু পানি কমার জন্য নয়, বরং সহজেই যাতে জীবন ভেসে না যায়, তেমন নিশ্চিত ভবিষ্যতের।