ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ১৩২টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। এখনও অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রয়েছেন।
সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯টি পরিবার অন্যের বাড়িতে বা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। কেউ কেউ বাঁশের খুঁটির ওপর পলিথিনের ছাউনি টানিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, ফুলগাজীতে ২০টি ও পরশুরামে ২৮টি কাঁচা ও আধাপাকা ঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। প্রতি ঘরের গড় ক্ষতি ২ লাখ টাকা হিসেবে হিসাব করলে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি টাকা।
আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুলগাজীতে ৪৯৫টি, ছাগলনাইয়ায় ৩০৪টি এবং পরশুরামে ৬৯টি ঘরবাড়ি। এসবের আর্থিক ক্ষতি আনুমানিক ৮ কোটি টাকা।
ফুলগাজীর সদর, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট ও আমজাদহাট ইউনিয়নের অন্তত ৬৭টি গ্রাম এখনও মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানিতে প্লাবিত রয়েছে।
রোববার সরেজমিনে উত্তর দৌলতপুর গ্রামে দেখা যায়, হোসনে আরা বেগম নামের এক নারী নিজ ভিটায় বসে আছেন। পাশের একটি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের পাশে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। এক বন্যায় পুরো নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকারি কোনো সহায়তা এখনও পাইনি।’
সোমবার রাতে মাছ ধরতে গিয়ে ফুলগাজী সদরের রাজু নামের এক তরুণ স্রোতে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারান।
পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ ও পৌর এলাকার ৪৪টি গ্রাম এবং ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর, রাধানগর ও শুভপুর ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামে পানি ঢুকেছে।
ফেনী সদর উপজেলার ৯টি ও দাগনভূঞার ২টি গ্রামও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও পানির উচ্চতা বাড়ায় ঘরের টিনের ছাদ পর্যন্ত পানি উঠে গেছে।
বন্যার পানি নামলেও অনেক এলাকায় এখনো মানুষ ঘরে ফিরতে পারেনি। প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্গতদের সহায়তায় কাজ করছে।
চলতি মাসের শুরুতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পরশুরাম অংশে ২২টি এবং ফুলগাজী অংশে ১৯টি– মোট ৪১টি স্থানে নদীভাঙন দেখা দেয়।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, ‘আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতি হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে।’

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘এবারের বন্যায় জেলায় প্রায় এক লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ফেনীতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতে ৩৮ কোটি ৭ লাখ, মৎস্য খাতে ৮ কোটি ৭১ লাখ, প্রাণিসম্পদ খাতে ৬৫ লাখ, সড়ক অবকাঠামোতে ৯০ কোটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতি ৯ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের বন্যায় জেলায় আরও বড় আকারে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেবার ৭০ হাজার ৪১৫টি কাঁচা ও আধাপাকা ঘর, আসবাব ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পানিতে তলিয়ে যায় এবং আনুমানিক ৫৩৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭ হাজার ৩৫০টি পরিবার এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছিল ৫৬ হাজার ৬৫টি ঘরের।