গাজনার বিলে স্লুইসগেট খুলে তলিয়েছে ২০০ বিঘা জমি

2 Min Read
তলিয়ে যাওয়া জমিতে দিশেহারা কৃষকরা। রোববার দুপুরে পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিল থেকে তোলা। ছবি: টাইমস

পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলে তালিমনগর স্লুইসগেটের পানি হঠাৎ ছেড়ে দেয়ায় অন্তত ২০০ বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ঘটনায় ক্ষতি পোষানোর চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই স্লুইসগেটের পানি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, পাটচাষীদের দাবি এবং বিলে মৎস্যসম্পদ রক্ষার বিষয় বিবেচনা করেই পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বাদাই গ্রামের অংশের গাজনার বিলজুড়ে পানি জমে আছে। বেশিরভাগ ধানের গাছ পানিতে ডুবে গেছে। নিজের হাতে বপন করা ধানের এমন পরিণতি দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

বাদাই গ্রামের কৃষক বকুল শেখ জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান বপন করেছিলেন। এর মধ্যে সাত বিঘা জমির ধান একরাতের ব্যবধানে তলিয়ে গেছে।

কান্নাজড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, “যদি ক্ষতিপূরণ পাই, তাহলে অন্তত বাঁচার মতো কিছু করতে পারি।”

শুধু বকুল শেখই নয়, তার মতো শতাধিক কৃষক একই দুর্দশার শিকার হয়েছেন।

স্থানীয় কৃষক রিজাই শেখ ও নাদের শেখ অভিযোগ করে বলেন, তালিমনগর স্লুইসগেট সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করেন ইউএনও। কিন্তু কোনো আলোচনা ছাড়াই তিনি পানি ছেড়ে দিয়েছেন, ফলে একরাতের মধ্যে ধান তলিয়ে গেছে।

তারা জানান, আগে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি।

ইউএনও মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ এ বিষয়ে বলেন, “পাটচাষীদের চাহিদা এবং বিলে মাছের প্রজনন বিবেচনায় জুলাইয়ের শুরুতে পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ, পাট কাটার সময় হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় পানি ছিল না। এছাড়া জোয়ারের পানির সঙ্গে রেনু পোনাও আসে।”

তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, “কৃষকরা আমাদের জানিয়েছিলেন, যেন পানি ধীরে ধীরে ছাড়া হয়। কিন্তু উঁচু এলাকার পাটচাষীদের চাপ ও দাবির প্রেক্ষিতে ইউএনও বাধ্য হয়ে পানি ছেড়েছেন। তবে পাম্প হাউজের মাধ্যমে পানি দ্রুত সেচে ফেললে বেশিরভাগ জমির ধান রক্ষা করা সম্ভব হবে।”

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সুজানগর উপজেলায় ২ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান চাষ হয়েছে, যার বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭৭ মেট্রিক টন চাল।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *