সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এক বছর পূর্ণ হল সোমবার। এ উপলক্ষে তিনি (ওয়াকার-উজ-জামান) তার অধীনস্থদের সিভিল প্রশাসনকে সহায়তায় সর্বোচ্চ কর্তব্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এক অফিসার তার দরবারের বক্তব্যের উদ্ধৃতিতে দিয়ে বলেছেন, ‘তিনি বলেন, আমি যে সময়টাতে দায়িত্ব নিই, সে সময়ে আমরা এক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। আমরা এটিকে আহ্বান করিনি, কিন্ত এটি আমাদের কাছে এসেছে।’
বিশেষ এ দরবারটি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এটি চলে সোয়া এক ঘণ্টা।
এরপর সেনা অফিসারের বক্তব্যের পর্বটি দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। দেশের সব গ্যারিসন থেকে কর্মকর্তা, পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিক্ষা মিশনে থাকা অফিসাররও এ পর্বে অংশ নেন।
অতীতের কর্মকর্তাদের বক্তৃতার তুলনায়, সেনাপ্রধানের এই বক্তৃতাটি মূলত সেনাবাহিনী ও এর সদস্যদের বিষয়েই কেন্দ্রীভূত ছিল। জেনারেল ওয়াকারের বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে এক কর্মকর্তা বলেছেন,’আমাদের ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা সম্পন্ন করতে হবে।’
সব সদস্যকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো যেকোনো প্রচারণায় মনোযোগ না দিয়ে, নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি (ওয়াকার-উজ-জামান)।
ওই সময় প্রায় ৩০ মিনিটের উদ্বোধনী বক্তৃতার পর, প্রায় ২০ জন অফিসার বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। আর তার মধ্যে ছিল স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ও অন্যান্য বিষয়।
কর্মকর্তারা জানান, সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালে সৈনিক, এনসিও, জেসিও ও কমিশনধারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে দরবার ও তাদের বক্তৃতা দেওয়া একটি রেওয়াজ।
আরেক কর্মকর্তা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘সোমবারের দরবার ও কর্মকর্তাদের বক্তৃতা একই ঐতিহ্য অনুসরণ করেছে ও সভাগুলোয় মূলত সেনাবাহিনীর বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’
এটি সাধারণ রেওয়াজ হলেও, এবারের সভাগুলোর বিশেষ তাৎপর্য ছিল। কারণ, সেনাবাহিনী সিভিল প্রশাসনের সহায়তায় জনসেবামূলক দায়িত্ব পালন করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জেনারেল ওয়াকার তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেশ কঠিন সময় পার করেছেন।
জেনারেল ওয়াকার এর আগে ২১ মে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ তার বক্তৃতায়, দেশের জাতীয় নির্বাচন, করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর ও মব ভ্যায়োলেন্সের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন শেষ হলে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাও পোষণ করেন।
এর আগে, ২৪ মার্চের সভায় সিনিয়র সেনাবাহিনী কর্মকর্তারা দ্রুত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান। তারা ব্যারাকে ফিরে গিয়ে তাদের মূল দায়িত্বে মনোযোগ দিতে চান বলে জানানো হয়।
এদিকে, গত বছরের ২০ আগস্ট সকল বিভাগের সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে দরবার ও কর্মকর্তাদের বক্তৃতার আগে জেনারেল ওয়াকার বলেছিলেন, ‘সিভিল প্রশাসনে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রাথমিকভাবে প্রত্যাশার চেয়ে দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং এর বাস্তব কারণও রয়েছে।’
গত বছরের ৩ আগস্ট, জুনিয়র অফিসারদের মধ্যে একটি সাধারণ মনোভাব ছিল, ‘দেশের জনগণের ওপর গুলি করা হবে না।’
জেনারেল ওয়াকার তার প্রথম বক্তব্যে এই সংকল্প আরও দৃঢ়তার সঙ্গে পুনর্ব্যক্ত করেন, ‘এখন থেকে আর কোনো গুলি চলবে না।’ এই নীতি শেখ হাসিনার পদত্যাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এর ফলই ৫ আগস্টের ঘটনা।
ওই বছরের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনা জনমনে বড় ধরণের প্রভাব ফেলে, যা কয়েক দিনের মধ্যেই সরকার পতনের একদফা দাবিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন।