৪৭ বছরে বিএনপি: নতুন আবহে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা

মোশাররফ হোসেন বাবলু
4 Min Read
সম্প্রতি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে বিএনপির বিজয় শোভাযাত্রা। ছবি: টাইমস
Highlights
  • নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি তাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন সময়মতো না হলে তা ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে।

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে সোমবার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন প্রেক্ষাপটে ফ্যাসিবাদ মুক্ত আবহে হতে যাচ্ছে এই দিবস। দলের শীর্ষ নেতাদের প্রত্যাশা, ‘তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরে দায়িত্ব নেবেন দলের।’ নেতাকর্মীদের চাওয়া, মুক্ত পরিবেশে আবারো ঘুরে দাঁড়াবে জাতীয়তাবাদী দল।

তবে দলের অভ্যন্তরীণ সংকট ও নেতৃত্বের অভাবে সেই উদযাপন নেতাকর্মীদের জন্য অনেকটা হতাশার। ২০০৬ সালের পর থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে, দলের নেতাকর্মীরা একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায়, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু বিএনপি তখনো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়নি। দলের নেতৃত্বের এই ব্যর্থতার কারণে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেয়। এমনকি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের আন্দোলনে তারা মূল ভূমিকায় আসতে পারেনি বলে রাজনৈতিক বিশ্লষকরা মনে করেন।

সাংগঠিনকভাবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠেছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তার বয়স ৮১ বছর। তার এই শারীরিক অবস্থা ও অসুস্থতার কারণে তিনি দলের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম নন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ সম্পর্কে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। অন্যদিকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা এখন নেই, তবুও তিনি দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেননি।

দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে এলে দলের সাংগঠনিক শক্তি পুনরায় সুদৃঢ় হবে এবং দলের মধ্যে উৎসাহ ফিরবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, বর্তমানে দলের নেতৃত্বে কোনো সংকট নেই। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং শিগগিরই তিনি দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেবেন।’

বিএনপির বর্তমান অবস্থা দেখে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, তারা বর্তমান প্রযুক্তির সুবিধা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি, যেটি করতে অন্য অনেক রাজনৈতিক দল সক্ষম হয়েছে। অতীতে বিএনপি তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল এবং তাদের রয়েছে একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয় বিএনপি।  সে সময় দলের সাংগঠনিক অবস্থা ছিল অনেক মজবুত। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৮২ সালে খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্বে আসার পর থেকে দলের কর্মসূচি ও আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তিনি ১৯৯১ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন এবং এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে বিএনপি পরপর তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তবে, ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পরে দলটি সংকটে পড়ে।

আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য নানা কূটকৌশল গ্রহণ করে সফল হয়। ফলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তারা যেনতেনভাবে ভোটারবিহীন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাতের ভোটের মতো নির্বাচন করতেও সফল হয়। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এটিকে আওয়ামী লীগের সফলতা না দেখে বিএনপির ব‍্যর্থতা হিসেবে দেখতে চান।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামী ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে বলে আশা করছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি তাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি মনে করে, নির্বাচন সময়মতো না হলে তা ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে।

খালেদা জিয়া দলের স্থিতিশীলতা ও সংগঠন পুনর্গঠন করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর নির্ভরশীল। তারেক রহমান দেশে ফিরে আসলে দলের সাংগঠনিক শক্তি ফিরে আসবে বলে মনে করেন অনেক নেতাকর্মী। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে দলটিকে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে বলেও অনেকে মনে করেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *