লংকায় ঐতিহাসিক সিরিজ জয়েই চোখ বাংলাদেশের

টাইমস স্পোর্টস
5 Min Read
টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

শ্রীলংকা সিরিজে বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে একটি করে জয়। অবশ্য এই দুই জয়ের মাহাত্ম্য ছিল অনেকখানি, বাংলাদেশ দলকে দাঁড় করিয়ে ছিল ইতিহাসের দুয়ারে। শ্রীলংকার মাঠে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সেই সুযোগটা মেহেদী হাসান মিরাজরা হাতছাড়া করেছেন শেষ ম্যাচটা হেরে। ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও লিটন দাসদের সামনে সুযোগ এসেছে ইতিহাস গড়ার। বুধবার সিরিজ নির্ধারনী তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিততে পারলে শ্রীলংকার মাঠে ও তাদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশ।

শ্রীলংকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ষষ্ঠটি চলমান। সাফল্য বলতে সাকুল্যে চারটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সিরিজ জয় এখনো রয়ে গেছে অধরা। অবশ্য দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের রেকর্ডও খুব বেশি নেই। ২৭টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে এখন পর্যন্ত জিতেছে পাঁচটি, যার মধ্যে দুটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বাকি তিনটি আয়ারল্যান্ড, আরব আমিরাত ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

রেকর্ড কিংবা সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও বাংলাদেশের পক্ষে নেই। আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর পাকিস্তান সফরে হোয়াইটওয়াশ। শ্রীলংকা সফরেও যাত্রা শুরু হলো সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি হেরে। অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকাকে ১৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে দিয়ে মাত্র ৯৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ। এমন দাপুটে জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস ফিরেছে লিটন দাসদের মনে। নিজেদের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে পাওয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়ের ম্যাচে ছন্দে ফিরেছেন লিটন দাস, শামীম হোসেন পাটোয়ারী আরো একবার প্রমাণ করেছেন টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংটা তার ভালোই জানা। যে বোলিং ইউনিট আগের ম্যাচে স্রেফ উড়ে গিয়েছিল পাথুম নিসাঙ্কা আর কুশাল মেন্ডিসের ঝড়ে, একাদশে দুটো বদল আনার পর সেই পেসাররাই দেখালেন নিজেদের পুরনো রূপ।

কলম্বোর প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুই লংকান ওপেনারের তাণ্ডবে প্রথম সাত ওভারে লিটন বাধ্য হয়ে বল করিয়েছেন পাঁচজনকে দিয়ে। তবুও কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাননি বাংলাদেশের বোলাররা। যেভাবে ব্যাট করছিলেন দুজন, এর কোনো উত্তরই ছিল না তাদের কাছে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই স্বরূপে ফেরেন বাংলাদেশের বোলাররা। ডাম্বুলায় দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। পাওয়ারপ্লেতে শরীফুল ইসলামের শুরুর দুর্দান্ত স্পেল, তার সাথে ছন্দ ফিরে পাওয়া সাইফউদ্দিন আর মোস্তাফিজের কিপ্টে স্পেল। তবে ঘরের মাঠে শ্রীলংকাকে তাদের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহে গুটিয়ে দেয়ার ম্যাচে বাংলাদেশের হাইলাইটস হয়ে রইলেন রিশাদ হোসেন, ৩.২ ওভারে ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে।

বোলিং ইউনিটে ছন্দ ফেরার সাথেসাথে দলের স্বস্তির আরেকটা কারণ লিটনের ব্যাটে রান। ১৩ ইনিংস পর ফিফটি পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বাংলাদেশের ইনিংসের ৮ ছক্কার ৫টি মেরেছেন তিনি। ৭ রানে দুই ওপেনার ফেরার পর তাওহিদ হৃদয়ের সাথে ৬৯ রানের জুটির পর, শামীমের সাথে পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাত্র ৩৯ বলে তুলেছেন ৭৭ রান। সব মিলিয়ে লিটনকে ব্যাট করতে দেখা গেছে লিটনের মতোই। পাঁচ ছক্কা, এক চারে ৫০ বলে ৭৬ রানের ইনিংস।

লিটনের ম্যাচ সেরা হওয়ার রাতে শামীমের ২৭ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংসটা ঠিক কতখানি কার্যকরী ছিল, সেটা বলাই বাহুল্য। তবে শামীম কত রানের ইনিংস খেলেছেন, এর চেয়ে বেশি আলোচনা হওয়া উচিত তার রান তোলার ধরণ আর শট সিলেকশন নিয়ে। কিছুদিন আগেও শামীমের একটা ‘বদনাম’ ছিল কেবল লেগ সাইডে শট খেলে রান তোলার জন্য। দ্বিতীয় ম্যাচে এই বাঁহাতি ব্যাটার দেখালেন, উইকেটের চারপাশেই তার শট খেলার সক্ষমতা আছে। ৪৮ রানের ইনিংসে দুটো ছক্কা ও পাঁচটি চার। এর মধ্যে কেবল একটা চার মেরেছেন মিড উইকেটে, আর ছক্কা একটা ডিপ ফাইন লেগে। বাকি সব বাউন্ডারিই বের করেছেন অফসাইড দিয়ে। সবচেয়ে বেশি রান তুলেছেন কাট শটে। তবে শটের রেঞ্জ যে বেড়েছে, নুয়ান থুসারাকে লং অফ দিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে মারা ছক্কাটাই বলে দিচ্ছে।

প্রথম ম্যাচে ভালো শুরু পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন দুই ওপেনার পারভেজ ইমন-তানজিদ হাসান তামিম। হৃদয়ের ধীরগতির ব্যাটিং আর অফস্টাম্প লাইনের ডেলভারিগুলোতে নড়বড়ে ভাবটাও চোখে পড়ার মতো ছিল শেষ দুই ম্যাচে। এর সাথে মিরাজের ব্যাটিং এপ্রোচ, পাঁচ নম্বরে নেমে রান তুলতে না পারাও খানিকটা চিন্তার খোড়াক যোগাচ্ছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে।  শেষ ম্যাচের মিরাজের একাদশে জায়গা হয় কিনা, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তাকে বাদ দিলে একাদশে আসতে পারেন আরেক অলরাউন্ডার শেখ মাহেদী। অন্তত টি-টোয়েন্টিতে বোলিংয়ের বিচারে মিরাজের চেয়ে তাকে এগিয়ে রাখতেই হবে। ২৬.৬৩ বোলিং গড় নিয়ে মাহেদী এগিয়ে ঢের এগিয়ে ৩৬ গড়ের মিরাজের চেয়ে। এর সাথে মাহেদীর বোলিং বৈচিত্র্যও এগিয়ে রেখেছে তাকে।

একাদশে বদল আসবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত টিম ম্যানেজমেন্ট আর অধিনায়কের। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে পাওয়া মোমেন্টাম ধরে রেখে শেষ ম্যাচটা জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিতে চায় বাংলাদেশ। সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনও বললেন, দল মাঠে নামবে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যেই। মঙ্গলবার কলম্বোতে সংবাদ সম্মেলনে এসে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘লাস্ট ম্যাচটা আমরা যেভাবে খেলেছি, আমার মনে হয় ছেলেরা অনেক ভালো মোমেন্টাম পেয়েছে, আত্মবিশ্বাসও ফিরে পেয়েছে। আশা করি শেষটা ভালোভাবে করতে পারব আমরা।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *