পাবনার রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় পাঁচ হাজার রুশ নাগরিকের পদচারণায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। যে জায়গাটি এক সময় ছিল অনাদর-অবহেলায়, এমনকি কেউ চিনত না। আজ সেই জায়গাটিই বেশ পরিচিত। এখন এই এলাকাকে ‘রূশপুর’ বা ‘রুশ পল্লী’ হিসেবে বলা হয়।
রূপপুরে রাশিয়ানদের বসবাসের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ‘গ্রিন সিটি’ নামে বহুতল আবাসিক ভবন। সেটিকে ঘিরে সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। মাত্র দশ বছরে রূপপুরের নাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছেছে।
২০১৩ সালে পাবনার রূপপুর পারমানিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করা হয়। পুরোদমে কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর। প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। রাশিয়ানদের পাশাপাশি বেলারুশ ও উজবেকিস্তানের বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদচারণায় বদলে যাচ্ছে রূপপুরের চিত্র।
বাজারঘাট, দোকানপাট, রেস্তোয়ায় পণ্য কেনাবেচায় বাংলার পাশাপাশি রাশিয়ান ভাষারও প্রচলন শুরু হয়। রাশিয়ানদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামের সাইনবোর্ডেও বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি লেখা হয়েছে রাশিয়ান ভাষা। রাশিয়ানদের কথা মাথায় রেখে নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাজিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সেখানে বিক্রি হচ্ছে রাশিয়ানদের পোশাক থেকে শুরু করে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এতে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
রাশিয়ানদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ঈশ্বরদীতে নতুন করে তিনটি রিসোর্ট, আটটি রেস্তোরাঁ, ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল, পাঁচটি সুপারমল গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে, জেলা সদরে নির্মাণ করা হয়েছে একটি হাসপাতাল, দুটি রিসোর্ট এবং নতুন করে অন্তত পাঁচটি রেস্টুরেন্ট। এমনকি, রূপপুর প্রকল্পে তৈরি হয়েছে জেলার প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মস্থান।

সরেজমিনে দেখা যায়, রূপপুরের গ্রীন সিটিকে ঘিরে রুশ ফ্যাশান, গ্রীন লেনতা সুপার শপ, আফরাহিম পার্লস শপ, রাশ ডাইন, লন্ডন জেন্টস পার্লার, মিগোরা, জেনসিমসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, ‘চার বছর ধরে এখানে দোকানদারি করছি। তাদের কারণে আমাদের জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে। এখন বেশ ভালো আয় হচ্ছে।’
ঢাকা গুলশানের জুয়েলারি ব্যবসায়ী তোতা মিয়া এক বছর আগে রূপপুরে দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসা আগের চেয়ে কিছুটা ঝিমিয়ে গেছে। তবে, বিদেশিরা যতদিন আছে ততদিন আমাদের ব্যবসা আছে। তারা চলে গেলে আমরাও চলে যাব।’
ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা আশু প্রামাণিক বলেন, ‘এখানে মোটামুটি ভালো বেচাকেনা হয়। আগের চেয়ে ভালো আছি৷ বিভিন্ন ফল ও সবজি বিক্রি করি। দিনশেষে ভালো আয় নিয়ে বাড়ি ফিরি। এখন বউ-বাচ্চা সুখে আছি।’
কয়েকজন রুশ নাগরিক জানান, তারা এখানে প্রথমে আসার পর খুব সমস্যার মধ্যে পড়েন। বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলা, কিছু কেনাকাটা করতে গিয়ে ভাষা না জানার কারণে সমস্যা হতো। তবে কয়েক বছরে তারা ভাষা কিছুটা আয়ত্ত করেছে বলে এখন ভালো আছেন।
তারা আরও বলেন, ‘এখানকার মানুষ খুব ভালো। এখন তারা আমাদের ভাষা কিছুটা বুঝতে ও বলতে পারে। আমরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। তারা রাশিয়ান ভাষায় দোকানের নাম লিখেছে, আমরা যেমন চাই তেমন জিনিসপত্র পাচ্ছি।’
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের সাইট পরিদর্শক রুহুল কুদ্দুস জানান, এই প্রকল্পে প্রায় ২০ হাজার প্রকৌশলী-শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে রাশিয়া, বেলারুশ, উজবেকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় দুই হাজার বিদেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তারা রয়েছেন।