বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যেন এক নীরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পালাবদলের প্রহর গুনছে। বোর্ডের বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের বিদায় এখন কেবল সময়ের ব্যাপার, এমনটাই আভাস মিলেছে ক্রীড়া উপদেষ্টার বাসভবনে এক গোপন বৈঠক থেকে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গতকাল রাতেই যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাসায় গিয়ে দেখা করেন ফারুক আহমেদ। সেখানে তাঁকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়— সরকার বিসিবির শীর্ষ পদে পরিবর্তন চায়। যদিও সরকার কেন এই পরিবর্তন চায়, সে ব্যাখ্যা নাকি দেওয়া হয়নি। ফারুক নিজেও মুঠোফোনে সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন, তবে আলোচনার বিষয়বস্তু বলতে চাননি।
ফারুকের বর্তমান পরিচয় শুধু এনএসসি মনোনীত পরিচালক নয়, তিনি এখন নির্বাচিত সভাপতি। আইসিসির কড়া নীতিমালার কারণে সরকার সরাসরি তাঁকে বরখাস্ত করতে পারে না, যদি না তিনি নিজে পদত্যাগ করেন। ফলে আপাতত সরকার তাঁর কাছ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ চাইছে। জানা গেছে, ফারুক বিষয়টি নিয়ে ভাবতে দুই-এক দিন সময় চেয়েছেন।
যদি তিনি নিজে সরে না দাঁড়ান, তাহলে তা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বড় সংকটে ফেলতে পারে। সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে এর আগে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার মতো দল আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল।
নতুন চেহারা: বিসিবির নেতৃত্বে আমিনুল ইসলাম?
এই পালাবদলের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হতে পারেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। যদিও তিনিও জানিয়েছেন, বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব নিতে এখনো তাঁকে সরাসরি বলা হয়নি। তবে তিনি এটাও বলেছেন—সরকার তাঁকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনো একটা ভূমিকায় চায়, আর তিনি তা নিতে রাজি।
শোনা যাচ্ছে, আইসিসিতে তাঁর চলমান দায়িত্ব জুনেই শেষ হবে। এরপর তাঁকে প্রথমে এনএসসি মনোনীত পরিচালক করা হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত করে অন্তর্বর্তীকালীন বিসিবি সভাপতি করা হবে, অন্তত অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত।
বিসিবির সিইও-র পদ নিয়ে গুঞ্জন, দ্বিগুণ বেতন দাবি?
আমিনুলের নামে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হওয়ার গুঞ্জনও ছড়িয়েছিল। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এটি ভিত্তিহীন। এমনকি বেতন সংক্রান্ত আলোচনার কথাও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।
আইসিসির ছুটি নিয়ে বিসিবি মিশনে
বর্তমানে আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার, হাইপারফরম্যান্স ও ট্রেনিং এডুকেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমিনুল। তাঁর ভাষ্য, বিসিবির দায়িত্ব পালনের সময় আইসিসি তাঁকে ছুটি দেবে এবং কাজ শেষে আবার যোগ দিতে পারার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এমনকি তাঁর জন্য পদও খালি রাখা হতে পারে।
“দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত” — আমিনুল
আমিনুল বলেন,
“আমার বিসিবিতে দীর্ঘ সময় থাকার ইচ্ছা নেই। সৈনিক যখন ডাকে, তখন সে নিজের স্বার্থ দেখে না। দেশের প্রয়োজনে আমি বিসিবির যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। দেখা যাক কী হয়।”
সব মিলিয়ে বোর্ডের নেতৃত্বে এক নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। ফারুক বিদায় নিলে খুব দ্রুতই আমিনুলের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যদিও বিসিবির সংবিধান বা আইসিসির বিধি আইনি জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে পরিস্থিতি যতদূর গড়িয়েছে, তাতে বোর্ডে একটি নীরব কিন্তু দৃশ্যমান পরিবর্তনের বাতাস বইছে।