পাহাড়ে নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস

খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, কারা হেফাজতে মৃত্যুসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে পাহাড়িদের কয়েকটি সংগঠন।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

সমাবেশে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা। সঞ্চালনায় ছিলেন পিসিপি নেতা শান্তিময় চাকমা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দীপায়ন খীসা, আদিবাসী ফোরামের ফাল্গুনী ত্রিপুরা ও বিভূতিভূষণ মাহাতো, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের অংশৈসিং মারমা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জানকি চিসিম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রিয়া চাকমা,  মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের উসাইন মারমা প্রমুখ। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুর্মী চাকমা।

সভাপতির বক্তব্যে জগদীশ চাকমা বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেটি শুধু ধর্ষণ নয়। এটি আদিবাসীদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। এদেশের পথপরিক্রমায় পরিবর্তিত সকল শাসকই আদিবাসীদের অস্তিত্বকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করে গেছে আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ, ভূমি দখল, সাম্প্রদায়িক হামলা এবং গণহত্যার মাধ্যমে। বিগত কয়েক বছর ধরে কেএনএফ দমনের নামে সাধারণ নিরীহ বম জনগোষ্ঠীকে জেলে রেখে বিনা চিকিৎসায় মেরে ফেলার ঘটনা ঘটছে। এসব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।’

জনসংহতি সমিতির নেতা সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘যারা ধর্ষণ করেছে তাদের একটা রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলকে সেই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখি নাই। তারা সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। আইন, প্রশাসন সব সেই সেটেলারদের হাতে।’

‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, আপনার আমলে তিনজন নিরীহ বম চিকিৎসার অভাবে কারাগারে মারা গেছে। আপনাকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই , যদি এদেশের আদিবাসীরা ভালো না থাকে তাহলে এই দেশও ভালো থাকবে না।’

ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, ‘একটা ত্রিপুরা মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে অথচ রাষ্ট্র এখনও নিশ্চুপ। উল্টো যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের ওপর অন‍্যায়ভাবে লাঠিচার্জ করা হয়েছে। ধর্ষকদের নানানভাবে রক্ষা করে, প্রতিবাদী কন্ঠস্বরগুলোকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র আদিবাসীদের ওপর চলা নির্যাতনকে আরও উৎসাহ দিয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা অবস্থায় ভানলাল রুয়াল বমের মৃত্যুর দায় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। অবিলম্বে সকল নিরীহ বমদের মুক্তি দিতে হবে।’

অংশৈসিং মারমা বলেন, ‘ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে গেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বাহিনী  লাঠি চার্জ করে। তাহলে কি আমরা বলতে পারি যে এসব বাহিনী সেই সেটেলার ধর্ষককে সহযোগিতা করছে? পাহাড়ের এই ধর্ষণ সমস্যা, ভূমি সমস্যা সবকিছুর মূলে রয়েছে সেটেলার বাহিনী।’

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি দীপক শীল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর আমরা এমন একটি দেশের আশা করেছিলাম যেখানে আদিবাসী, বাঙালি সবাই সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। এই জন্য আমরা শেখ হাসিনা সরকারকে পতনে আন্দোলনে নেমেছিলাম। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ইউনুস সরকারও ঠিক একই পথেই হাটঁছেন।’

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *