অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন উপদেষ্টার ‘পদত্যাগ’ দাবি করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। তারা পদত্যাগ না করলে প্রধান উপদেষ্টাকে তাদের বিদায় করার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন বিএনপির এ সিনিয়র নেতা।
শনিবার বিকেলে খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি সালাউদ্দিন আহমদ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক? হুঁশিয়ার করে দিতে চাই ড. ইউনূস সাহেব, আপনি বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। আপনি সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন ডিসেম্বরের মধ্যে। যে কথা আপনি আমাদের দিয়েছিলেন।’
‘সংস্কার এবং বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেটি চালু থাকবে, যারাই সরকারে আসুক। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না। মনে করবেন না, রোজ কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো আমরা। এখন মানুষ আপনার সরকারকে বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, আবার এনসিপি সংগঠন করেন। অফিশিয়ালি করে না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে। ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাহলে সেই এনসিপি মার্কা সেই দুজনকে পদত্যাগ করতে বলেন। যদি পদত্যাগ না করেন, আপনি বিদায় করুন।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কী সেই আক্কেল জ্ঞান নাই। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে কীভাবে ভাবলেন। তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চান। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনও আলাপ-আলোচনা করেননি। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। হয় তিনি নিজে পদত্যাগ করবে, না হলে আপনি তাকে বিদায় করবেন। দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনও জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি কোনও নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য। আমরা তা হতে দেবো না।’
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই দেশে বন্দর, করিডর-সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, করিডর সব বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করবেন-কী চুক্তি করে এসেছেন? কী এখতিয়ার আছে আপনার? কী ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন। আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট বাংলাদেশে একটা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। সুন্দর, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আমরা বলছিলাম, যথেষ্ট হয়েছে, নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার, সেসব জরুরি সংস্কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন, আবার আপনি সরে গেলেন।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম (মুন্না)। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম (নয়ন)। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।