ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হয়েছে।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর তিন সদস্যের বেঞ্চে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। ট্রাইব্যুনালের সভাপতিত্ব করছেন বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদার।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর অনুমতি সাপেক্ষে এই বিচার কার্যক্রম রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
এর আগে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে ন্যায়বিচার কামনায় ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দেন।
বিচারিক কার্যক্রমে প্রসিকিউশনের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত রয়েছেন। মামুন এদিন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামুনের দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদনও একই দিনে মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়।
এর আগে গত ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল পলাতক শেখ হাসিনা ও কামালকে হাজির করতে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। পরদিন তা প্রকাশিত হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করায় আদালত তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেয় এবং অভিযোগ গঠনের শুনানি গ্রহণের আদেশ দেয়। পরে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের নির্দেশ আসে।
গত ১ জুন মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এরপর দায়ের হওয়া প্রথম মামলাটিই হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এটি ‘মিস কেস’ হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালে গুম-খুনের অভিযোগে এবং অপরটি মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার, প্রশাসনের অনুগত অংশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনার বিচার চলছে পুনর্গঠিত দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।