সিরিজ যায়, ফরম্যাট বদলায়, নতুন অধিনায়কও আসে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের দুর্দশা আর ফুরায় না। শ্রীলংকা সফরে টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজেও হেরেছে বাজেভাবে। তিন ওয়ানডের একটিতেও খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভার। কোথায় যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা, নিজেদের প্রিয় ওয়ানডে ফরম্যাটেও। সেই হতাশা ভুলে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস অবশ্য শুনিয়েছেন আশার কথা। বৃহস্পতিবার পাল্লেকেলেতে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে সর্বোচ্চটা দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা।
অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যে ফর্ম, তাতে খুব বেশি আশার আলো যে লিটনরা দেখাতে পারছেন না, সেটা বলাই বাহুল্য। অধিনায়ক হিসেবে লিটন নিজের দলের জন্যই ঢাল হয়ে দাঁড়াবেন সেটাই স্বাভাবিক এবং কাম্য। কিন্তু সহযোগী সদস্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর পাকিস্তান সফরে গিয়ে একই ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরে এলে ভরসাটা সহসাই যে যোগাতে পারছেন না ভক্তদের, লিটন নিশ্চয়ই সেটাও জানেন।
বাংলাদেশও সম্ভবত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে ২০২৪ সালের শুরু থেকে। এই ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচ খেলে হেরেছে ১১টি, জিতেছে মাত্র ৪টি। এর মধ্যে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে তিন ম্যাচের একটা সিরিজও জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্ত সেই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখতে পারেনি ২০২৫ সালে।
হেড টু হেড
শ্রীলংকার বিপক্ষে অবশ্য সর্বশেষ দেখায় জয়ের সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২ উইকেটে লংকানদের হারান লিটন দাস-তানজিদ হাসানরা। তবে মুখোমুখি দেখায় ঢের এগিয়ে শ্রীলংকা, ১৭ ম্যাচের ১১টিই জিতেছে তারা। বাকি ৬টি বাংলাদেশের দখলে। যেখানে আছে বেশ কিছু স্মরণীয় জয়ও। অবশ্য সেসব এখন ধুলোজমা অতীতের মলিন সব স্মৃতি।
জয়ের নতুন স্মৃতি জমাতে তাই সিরিজ জেতাকেই লক্ষ্য বানাচ্ছেন লিটন। সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলংকাকে হোম অ্যাডভান্টেজে এগিয়ে রাখলেও নিজেদের শতভাগ দেয়ার কথা বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমরা অবশ্যই চেষ্টা করবো। ব্যাপারটা সহজ হবে না, কারণ তারা তাদের হোম কন্ডিশনে বেটার সাইড। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করব।’
বাংলাদেশের দল হিসেবে ভালো করার প্রশ্নে জুড়ে আছে লিটনের ব্যাটিং পারফরম্যান্সও। প্রথম ওয়ানডেতে কোনো রান করতে পারেননি। বাদ পড়েছেন তাই পরের দুই ম্যাচ থেকে। এতে অবশ্য লিটনের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। টি-টোয়েন্টির জন্য নিজের প্রস্তুতিটা সারতে পেরেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। শেষ পাঁচ ইনিংসে কোনো ফিফটি না থাকলেও আছে দুটো চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস। তবুও সাদা বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সাম্প্রতিক ফর্মই ভোগাচ্ছে তাকে।
এর ওপর এই সিরিজে করবেন অধিনায়কত্ব, স্পটলাইটও তাই আলাদা করে তার ওপর থাকবে। গুঞ্জন আছে, নাজমুল হোসেন শান্তর ছেড়ে যাওয়া টেস্ট অধিনায়কের পদটাও পেতে পারেন লিটন। যার কাছে ইতোমধ্যে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেতৃত্ব আছে টি-টোয়েন্টির। কাজেই এই সিরিজটা দল কিংবা ব্যক্তিগত; সবদিক থেকেই লিটনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর শ্রীলংকার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জটা তো আছেই।
ভেন্যু
এই সিরিজটা বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যও শিক্ষণীয় হয়ে থাকতে পারে, যদি সুযোগটা তারা কাজে লাগাতে পারেন। কারণ ভারতের সাথে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক শ্রীলংকাও। লংকার কোন ভেন্যুর উইকেট কেমন আচরণ করে, টুর্নামেন্টের আগে সেই অভিজ্ঞতা জমলে সেটা নিশ্চয়ই কাজে লাগবে পারভেজ ইমন-তানজিদ হাসানদের।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টির ভেন্যু পাহাড়ঘেরা ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়াম। ২০ ওভারের ম্যাচের জন্য হাই স্কোরিং গ্রাউন্ড যাকে বলাই যায়। অবশ্য এই মাঠে প্রথম ইনিংসে গড়ে রান ওঠে ১৬৫-১৭০ করে। তবে পাল্লেকেলের মাঠ বৃষ্টির ছোঁয়া পেলে বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন করে তোলে। সব মিলিয়ে ২৬টি ম্যাচ এখন পর্যন্ত এই মাঠে আয়োজিত হলেও ফ্লাডলাইটের নিচে হয়েছে ১২টি। যেখানে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করা দল জিতেছে ৭টি, আর রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এখন পর্যন্ত মাত্র ৩টি। বাকি ২ ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। সেই হিসেবে টসও হতে পারে এক্স ফ্যাক্টর।
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ: তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন ইমন, লিটন দাস (অধিনায়ক), তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন, জাকের আলী, শেখ মাহেদী হাসান, তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান
শ্রীলংকা: পাথুম নিসাঙ্কা, কুশাল মেন্ডিস, কুশাল পেরেরা, আভিশকা ফার্নান্দো, চারিথ আসালাঙ্কা, দাসুন শানাকা, দুনিথ ভেল্লালাগে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ থিকশানা, নুয়ান থুসারা ও মাথিশা পাথিরানা।