কলম্বোতে কামব্যাকের রাতে মাহেদী ম্যাজিক

টাইমস স্পোর্টস
5 Min Read
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বারবার এভাবেই উড়েছেন শেখ মাহেদী। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি সাইডবেঞ্চে বসেই কেটেছে শেখ মাহেদী হাসানের। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজকে সরিয়ে তাকে সুযোগ দেয়া হলো একাদশে। কী দারুণভাবেই না সেই সুযোগটা কাজে লাগালেন এই অফস্পিনার। পাওয়ারপ্লে স্পেশালিস্ট খ্যাত মাহেদী ম্যাচ শেষ করলেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার ৪-১-১১-৪ নিয়ে। একাই গুড়িয়ে দিয়েছেন শ্রীলংকার টপ অর্ডার। দল সিরিজ জিতেছে, নিজেও হয়েছেন ম্যাচ সেরা। তাই ম্যাচ প্রেজেন্টেশন থেকে সংবাদ সম্মেলন; সবখানেই অধিনায়ক লিটন দাসকে শুনতে হয়েছে প্রথম দুই ম্যাচে কেন খেলাননি মাহেদীকে?

ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে লিটন বলেছেন, উইকেট দেখে একাদশ নির্বাচন করেন তিনি। সেই হিসেবে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেটে মাহেদীকে কার্যকরী মনে করেই ম্যাচ খেলিয়েছেন। আবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এই ম্যাচে আর কেউ খেলুক বা না খেলুল, মাহেদী খেলবে।’

যাকে নিয়ে এত আত্মবিশ্বাস লিটনের, সেই মাহেদী প্রথম দুই ম্যাচে বাইরে থেকে বসে দেখেছেন তার জায়গায় খেলা মিরাজ ব্যাটে-বলে কীভাবে কঠিন সময় পার করেছেন এই সিরিজে।  দুই ম্যাচে দুই উইকেট নিয়েছেন, ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে রান করেছেন ২৯ ও ১। দুজনের প্লেইং রোলও একই। মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন, সাথে করেন অফস্পিন। অবশ্য টি-টোয়েন্টির বোলিং গড়ে মিরাজের চেয়ে ঢের এগিয়ে মাহেদী। পরিসংখ্যান দূরে সরিয়ে রাখলেও মিরাজের বদলি হিসেবে মাহেদীকে দলে নেয়ার সিদ্ধান্ত যে ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে, সেটার প্রমাণ ম্যাচের স্কোরকার্ডই দিচ্ছে।

বোলিংয়ে এসেছেন শ্রীলংকার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। বাঁহাতি কুশাল পেরেরাকে স্ট্রাইকে পেয়ে অধিনায়ক লিটন স্লিপে দাঁড় করিয়ে দিলেন তানজিদ তামিমকে। পাওয়ারপ্লেতে নেয়া সেই ঝুঁকির বিপরীতে ‘রিওয়ার্ড’ও পেল বাংলাদেশ। অফ স্টাম্পের বাইরে জোরের ওপর করা ডেলিভারি পেরেরার ব্যাট ছুঁয়ে গেল তানজিদের হাতে। তিন বছর পর টি-টোয়েন্টিতে ফেরা দীনেশ চান্দিমালও মিসহিটে টপ এজে ধরা পয়েন্টে জাকের আলীর হাতে পড়লেন মাহেদীর কুইকার ডেলিভারিতেই। শ্রীলংকার প্রথম পাঁচ উইকেটের চারটা একাই নিয়েছেন মাহেদী। তবে এই অফস্পিনার নিজের সেরা ডেলিভারিটা করেছেন লংকান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কাকে।

ইনিংসের অষ্টম ও মাহেদীর তৃতীয় ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিটার আগে লিটনকে স্টাম্প মাইকে বলতে শোনা গেল , ‘মামা বলটা ঘুরাইয়া একটু জোরে মারতে পারবি?’। মাহেদীও নিজের অধিনায়কের কথা রাখলেন। তার বিশেষ অস্ত্র জোরের ওপর টার্নিং ডেলিভারি; সেটাই বের করে আনলেন ঝোলা থেকে। এরাউন্ড দ্য উইকেটে মাহেদীর লেংথ বল পেয়ে ব্যাকফুটে খেলতে চাইলেন আসালাঙ্কা। গুড লেংথে পড়া সেই বলের লাইন মিস করলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। শেষটায় ছুঁয়ে গেল তার অফস্টাম্প।

প্রতিটা উইকেটের পর যেভাবে চিৎকার করেছেন, শূন্যে লাফিয়ে উদযাপন করেছেন, নীরবতা নেমে আসা প্রেমাদাসায় প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এসেছে তার নিজের কাছেই। শুধুই কি উদযাপন ছিল? না, এর মাধ্যমে টিম ম্যানেজমেন্ট, দেশের ক্রিকেটের ভক্তদের কাছেও একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা ছিল মাহেদীর ‘ফুরিয়ে যাইনি।’

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ম্যাচ সেরা শেখ মাহেদী হাসান। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

সম্ভবত নিজের কাছেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার মতো একটা বোলিং স্পেল মাহেদী করেছেন কলম্বোতে। আরব আমিরাত সফরে প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ২ উইকেট পেলেও রান দিয়েছিলেন ৫৫। তাই পরের ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ। এক ম্যাচ পর ফিরে ৪ ওভারে ৩৬ দিয়ে উইকেট শূন্য। ফলাফল, পাকিস্তান সফরে পেলেন মাত্র এক ম্যাচ, সেখানেও ৩৬ রানে ১ উইকেট নেয়াটা আহামরি কোনো পারফরম্যান্স নয়। কিন্তু মজার ব্যাপারটা দেখুন, তাকে ফেরানো হলো এমন ম্যাচে, যেখানে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। এমন ম্যাচে বল হাতে ব্যর্থ হলে লিটনের সাথে তার মুণ্ডুপাত যে হতো; সেটা বলাই বাহুল্য।

সুযোগটা দেননি মাহেদী, নতুন বলে নিজের স্কিলসেটকে কাজে লাগিয়ে। সাবেক ক্রিকেটার  ও এইচপির কোচ রাজিন সালেহও বললেন মাহেদীর উন্নতির গ্রাফটা তার চোখে উর্ধ্বমুখী। আগের মাহেদী ও বর্তমান মাহেদীর মধ্যে ফারাকটা উঠে এলো টাইমস অফ বাংলাদেশে-র সাথে তার আলাপচারিতায়।

শেষ টি-টোয়েন্টিতে মাহেদীর পারফরম্যান্স নিয়ে রাজিন বলেন, ‘মাহেদী শর্টার ভার্সনের জন্য আসলেই ভালো বোলার। ভালো বল করেছে, কিন্তু সাধারণত তার যে অফস্পিন বলটা সেটা আগে ওভাবে হতো না। স্পিনার হিসেবে আপনার বল যদি টার্ন না করে, স্পিন না করে তাহলে ভালো জায়গায় বল করা কঠিন। তবে এই ম্যাচে যেমন দেখলাম, সেকেন্ড ইনিংসে তামিম যেভাবে স্পিনারদের মেরেছে; তাতে বলতেই হয় মাহেদী অনেক ভালো করেছে। বড়সড় সব টার্ন পেয়েছে। আমি এখন মনে করি অনেক উন্নতি করেছে বোলিংয়ে।’

সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, প্রথম দুই ম্যাচে মাহেদীর না খেলার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন দলের পরিকল্পনাকে। তবে ফিরে এসে এভাবে পারফর্ম করা মাহেদীর প্রশংসা করেছেন খোলা মনেই, ‘টিমের স্ট্র্যাটেজি আসলে ভিন্ন ভিন্ন হয়, সারফেসের একটা ব্যাপার থাকে। শেখ মাহেদীর একটা বড় গুণ, নতুন বলে বল করতে পারে। এই স্কিলটা ওর আছে। আগেও ছিল, এখনও আছে। হয়তো প্রথম দুই ম্যাচ স্ট্র্যটেজির জন্য খেলেনি, কিন্তু ফিরে এসে যে প্রমাণ করছে এটাই সবচেয়ে বেশই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *