অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা হারানোয় বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও নেতারা কিছুটা সন্দিহান। তাদের অভিযোগ, সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার প্রশ্নে অহেতুক কালক্ষেপণ করছে। এর নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও দেখছেন তারা।
বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন এবং সংখ্যানুসারে আসন বন্টন (পিআর সিস্টেম)—ইত্যাদি ইস্যু আসলে নির্বাচন স্থগিতের আভাস ।
অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। এরপরেও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিএনপি এখনো সন্দিহান। তাদের আরও অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি।
এ নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা স্ট্যান্ডিং কমিটিতে সম্প্রতি আলোচনাও হয়েছে। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি এখন সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ এবং নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখের জন্য অপেক্ষা করছে।
দলের ওই স্থায়ী কমিটির সভায় শীর্ষ নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণার আহ্বান জানান।
দলীয় সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুমতি সাপেক্ষে এ নিয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচন অবশ্যই আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে হবে।’
বিএনপি আশঙ্কা, ১৩ জুন লন্ডনে ইউনূস ও তারেকের যৌথ ঘোষণায় ২০২৬ সালে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণায় মাঠ পর্যায়ে যে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল, নির্বাচন আরও বিলম্বিত করার পরিকল্পিত কৌশল হিসেবে সম্প্রতি একের পর এক রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি খোদ তারেক রহমানও আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। সবশেষ ভিডিও বার্তায় তিনি জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশের সহায়তায় একটি পরিকল্পিত পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে, যা নির্বাচনের গতিরোধ করবে।’
বিএনপি নেতারাও দাবি করেছেন, সরকারের নীরবতা এবং নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনের সঠিক সময়সূচি ঘোষণা না করায় কমিশন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারছে না।
বিএনপির স্থার্য় কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারির মধ্যে হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময় ঘোষণা করা হবে, তবে তা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ঘোষণা করা উচিত।’
বিএনপি নেতারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে ‘লোক দেখানো ফাটল’ এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি—নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল হতে পারে।