নির্বাচনী জোট: জামায়াতকে না, এনসিপির সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত বিএনপির

ইউএনবি
5 Min Read
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলাকালে বিরতির সময় হাতে হাত রেখে ছবি তোলেন বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতেরে আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও এনসিপির নাহিদ ইসলাম। ছবি: বায়েজিদ আক্তার/টাইমস
Highlights
  • নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জোট নিয়ে আলোচনা চলবে। কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনার দরজা এখনই বন্ধ হচ্ছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এক সাক্ষাৎকারে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে দাবিদাওয়া তুলছে, তা তাদের বৃহত্তর কৌশলের অংশ। আমরা আশা করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাকে দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সতর্ক করেন, ‘অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘায়ন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।’

জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনি জোট গঠনের কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। অতীতে কৌশলগত কারণে আমরা তাদের সঙ্গে জোট করেছিলাম, কিন্তু এবার সেই প্রয়োজন নেই।’

তিনি জানান, বিএনপি এখন মূলত সেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠনে আগ্রহী যারা একযোগে আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। ‘এখন এর বাইরে কিছু ভাবা হচ্ছে না,’ বলেন তিনি।

এনসিপির সঙ্গে সম্ভাব্য জোট নিয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জোট নিয়ে আলোচনা চলবে। কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘সব গণতান্ত্রিক দলই নির্বাচনের আগে নানা কৌশল গ্রহণ করবে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি কী কৌশল নেবে এবং কার সঙ্গে জোট করবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এই আলোচনা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যেই এটি শেষ হওয়া উচিত ছিল।’

‘কমিশনের বৈঠক পরিচালনায় কিছু ঘাটতি রয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে সময়সাপেক্ষ করে তুলছে। আশা করি, আলোচনা আর বেশি দিন চলবে না। এখন সারসংক্ষেপ এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে,’ বলেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কার্যত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে দাবি করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এখন কেবল সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ রায়ের অপেক্ষা। আমরা আশা করি, আপিল বিভাগ ইতিবাচক রায় দেবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চায়। কাঠামোর রূপ বা প্রধান উপদেষ্টার পরিচয় নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। বিকল্প কাঠামো নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি নতুন কোনো প্রস্তাবে একমত না হওয়া যায়, তবে বিদ্যমান কাঠামোই বহাল থাকবে।’

আসন্ন নির্বাচনে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই ব্যবস্থার জন্য উপযুক্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতি এখনো তৈরি হয়নি।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘পিআর ব্যবস্থায় ভোটাররা সরাসরি তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেন। এতে ভোটাররা নিরুৎসাহিত হন এবং সংসদে স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়।’

‘বাংলাদেশের ভোটাররা স্থানীয়, পরিচিত প্রার্থীকে ভোট দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু পিআর ব্যবস্থায় এমনও হতে পারে যে কোনো এলাকায় কোনো দল বেশি ভোট পেলেও অন্য এলাকার প্রার্থী নির্বাচিত হয়। এটা জনগণের রায় প্রতিফলিত করে না বরং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দেশে পিআর ব্যবস্থা কার্যকর, সেসব দেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী। কিন্তু বাংলাদেশে এমপিরা সরাসরি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাই এখানে পিআর কার্যকর হবে না।’

পিআর ব্যবস্থার আরেকটি সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের সুযোগ হারাবেন। কোনো ব্যক্তি জনপ্রিয় হলেও, কোনো দলের প্রার্থী না হলে তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন না। এটি অন্যায় এবং অগণতান্ত্রিক।’

তার মতে, ‘ছোট দলগুলো পিআর চায়, কারণ এতে তারা কম ভোট পেয়েও বেশি আসন পেতে পারে। কিন্তু এতে দুর্বল জোট সরকার গঠিত হয়, শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে ওঠে না।’

বিএনপির পক্ষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে প্রতিনিধিত্বকারী এই নেতা বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন কোনো অবস্থাতেই বিএনপি মেনে নেবে না।”

‘বিভিন্ন দল বিভিন্ন দাবি তুলছে- কেউ সংস্কার চায়, কেউ বিচার ছাড়া নির্বাচন নয় বলছে, কেউ পিআর চায়। এসব রাজনৈতিক কৌশল। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা সম্মান করি এবং তাদের জন্য শুভকামনা রাখি। তবে প্রকৃত রাজনৈতিক ওজন আসে জনসমর্থন থেকে। ছোট কিছু দল বড় কথা বললেও, তারা খুব কম সংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। রাজনীতিতে সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় জনমত।’

বিএনপির জোটসঙ্গী দলগুলোর মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা দর-কষাকষির কৌশলের অংশ হতে পারে, যেমন আসন ভাগাভাগি।’

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার মতে, আওয়ামী লীগ আর রাজনৈতিক দল নয়। তারা বহু আগেই আদর্শ ও চরিত্র হারিয়েছে। এখন তারা একটি অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদী শক্তিতে পরিণত হয়েছে—একটি মাফিয়া সংগঠনের মতো। ১৯৭৫ সালের আগ থেকে আজ পর্যন্ত তাদের ইতিহাসে কখনো গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। গণতন্ত্র তাদের রক্তেই নেই।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *