মাদারীপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকালে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে ‘আড়িয়াল খাঁ’ নদের পাড়ে ভীড় করেন হাজার হাজার দর্শক। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজন দেখে আনন্দে মেতে উঠেন তারা।
সদর উপজেলার হবিগঞ্জ থেকে চরবাজিতপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলে এই আয়োজন। আলাদাভাবে এতে অংশ নেয় বাঁশকান্দি এক্সপ্রেস, ময়ূরপঙ্খি, বাঘা, টাইটানিকসহ বাহারী নামের আটটি নৌকা। যা দেখে আনন্দে মেতে ওঠেন দর্শকরা। জামাই স্বপন বয়রা আর শ্বশুর বাদশা মাতুব্বর প্রতিযোগিতার প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মিনি সুইজারল্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও পার্কের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচে প্রথম প্রতিযোগীকে পুরষ্কার হিসেবে দেওয়া হয় একটি ঘোড়া। এছাড়া ফ্রিজ, টিভিসহ প্রত্যেকের জন্য ছিল আলাদা পুরষ্কার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কাঁসার ঘণ্টার টুংটাং আওয়াজ, আর জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মুখর নদীর চারপাশ। মাঝিমাল্লার হাতে থাকা বৈঠা চলছে তালে তালে, সঙ্গে হৈইহুল্লোরে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় যেন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষজন হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন। কেউবা আবার ট্রলারে চড়ে আনন্দ উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠান দেখতে উপস্থিত হন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খানসহ অনেকেই।
কালিরবাজার এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থী রুবেল মিয়া বলেন, ‘পুরো পরিবার নিয়ে এই নৌকাবাইচ দেখতে এসেছি। খুবই মজা পেয়েছি। অনেকদিন পর এই আয়োজন সবাইকে আনন্দ দিয়েছে।’
‘ইজিবাইকে মা-বাবা এবং চাচিকে নিয়ে এই নৌকাবাইচ দেখতে এসেছি। হবিগঞ্জ সেতুর উপর দাঁড়িয়ে নৌকাবাইচ দেখতে পারাটা আলাদা একটি অনুভূতি। প্রতি বছর আমরা এই উৎসব দেখতে চাই’ বলে জানান খাগদি থেকে আসা দর্শণার্থী প্রিয়া আক্তার।
প্রথম স্থান অধিকার করা স্বপন বয়রা বলেন, ‘প্রথম হওয়ার আনন্দই আলাদা। তার সঙ্গে ৭৫ জন মাঝিমাল্লাকে এক সঙ্গে গুছিয়ে অংশ নেওয়া বড় ব্যাপার। যেকোন স্থানে প্রতিযোগিতা হলে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আছে।’

আগামীতে আরও বড় আকারে এই আয়োজন করার আশা প্রকাশ করেন আয়োজক মহসিন খান। তিনি বলেন, ‘আড়িয়াল খাঁ নদের দুইপাড়ে অন্তত ৫০ হাজার দর্শক জড়ো হয়। এত মানুষ হবে বুঝতে পারিনি। এলাকবাসী আনন্দ নিয়েই পুরো আয়োজন উপভোগ করেছে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, নৌকাবাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় থানা-পুলিশ, নৌপুলিশ ও তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে।