অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএ’র ‘কঠোর শর্ত’

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
নীতিমালা চূড়ান্ত হলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে বিআরটিএ’র নিবন্ধন নিতে হবে। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস
Highlights
  • ‘বহুসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক রাজধানীসহ সারা দেশে চলাচল করছে। ফিটনেসবিহীন এ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল ট্র্যাফিক ব্যবস্থাকে চরম বিশৃঙ্খল করে তুলেছে।’

দেশে চলমান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বিশৃঙ্খলা নিরসনে ‘বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫’–এর খসড়া করেছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধন ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মহাসড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে, চলবে শুধু নির্ধারিত রুটে।

ইউএনবি জানায়, নীতিমালা চূড়ান্ত হলে দেশে সব ধরনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। চালকদের থাকতে হবে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ এবং ট্যাক্স টোকেন। মধ্যম গতির অটোরিকশার সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫০ কিমি এবং ধীরগতির অটোরিকশার জন্য ৩০ কিমি নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান অননুমোদিত ও অনিরাপদ অটোরিকশাগুলোকে এক বছরের মধ্যে নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে। সময়সীমা পেরিয়ে গেলে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি মধ্যম গতির ও পাঁচটি ধীরগতির অটোরিকশার মালিক হতে পারবেন। কোম্পানির নামে নিবন্ধনের সীমা ২৫টি। কোনো প্রস্তুতকারী বা বিক্রেতা বিআরটিএর তালিকাভুক্ত না হয়ে যানবাহন বা যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারবে না।

কোন এলাকায় কতগুলো অটোরিকশা চলবে, তা নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ কমিটি। বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ায় এসব যানবাহন চলবে। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও ওজন নির্ধারণ করা হয়েছে—যেমন, ধীরগতির অটোরিকশার ওজন হতে পারবে সর্বোচ্চ ৫০০ কেজি (ব্যাটারিসহ)।

নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় মধ্যম ও ধীরগতির বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার জাতীয় মহাসড়কে চলতে পারবে না; তবে সার্ভিস লেনে চলাচলের অনুমতি থাকবে। রাজধানীসহ সিটি করপোরেশন, ‘এ’ ক্যাটাগরির পৌরসভা এবং নির্দিষ্ট জেলা-উপজেলার রুটে এ যানবাহন চলতে পারবে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস

সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এহসানুল হক বলেন, ‘বহুসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক রাজধানীসহ সারা দেশে চলাচল করছে। ফিটনেসবিহীন এ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল ট্র্যাফিক ব্যবস্থাকে চরম বিশৃঙ্খল করে তুলেছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সংখ্যায় এ যানবাহন এত বেড়েছে যে রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে এগুলোকে কয়েক দফা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেও বন্ধ করা যায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘থ্রি-হুইলার বা অটোরিকশাগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন পর্যায় থেকে একটি নীতিমালা করার দাবি ছিল। আমরা একটি নীতিমালার খসড়া করেছি। বাস্তবতার নিরিখেই খসড়াটি করা হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নিয়ে এটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। খুব শিগগিরই তা চূড়ান্ত হবে। চূড়ান্ত নীতিমালাটি হলে ব্যাটারিচালিত রিকশার যে বিশৃঙ্খলা, তা কেটে যাবে বলে আমরা মনে করি।’

খসড়া অনুযায়ী, অটোরিকশার যন্ত্রাংশ (যেমন মোটর, কন্ট্রোলার, ব্যাটারি, হেডলাইট) দেশে তৈরি হলে তা বিএসটিআই ও বিআরটিএ অনুমোদিত হতে হবে। আমদানির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অটোরিকশা চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে এবং প্রশিক্ষণ নিতে হবে। গাড়ির ভেতরে মালিক ও চালকের মোবাইল নম্বর দৃশ্যমানভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। চার্জিং স্টেশন স্থাপন করতে হবে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশিকা অনুযায়ী।

একইসঙ্গে কৃষিকাজ ও নৌযানে ব্যবহৃত ডিজেল-পেট্রোল ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি অননুমোদিত যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব জায়গায় অনুমোদিত যান চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

অপরাধ বা নিয়ম ভাঙার ক্ষেত্রে ‘সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮’-এর আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নীতিমালার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি বিশৃঙ্খল সেক্টরকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার প্রত্যাশা করছে সরকার।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *