বাংলাদেশে পরিচ্ছন্ন ক্রিকেটের আশায় মার্শাল

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখার রহমান মিঠু (বায়ে), সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও অ্যালেক্স মার্শাল। ছবি: টাইমস

গত মৌসুমের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে নানাবিধ কারণে। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হোটেল ভাড়া, বাসা ভাড়া বকেয়া থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে গড়িমসির অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু সব ছাপিয়ে আলোচনায় এসেছে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ, নির্দিষ্ট তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির বিরুদ্ধে। জড়িয়েছে ১০ জন ক্রিকেটারের নামও, যাদের মধ্যে ২ জন বিদেশি। বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিসিবি গঠন করেছিল স্বাধীন তদন্ত কমিটিও। তাদের তদন্ত রিপোর্টের একাংশ বাইরে আসাতেই নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। 

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দুর্নীতি ও ফিক্সিংয়ের থাবা থেকে মুক্ত রাখতেই ইন্টেগ্রিটি ইউনিট চালু করতে যাচ্ছে বিসিবি। সর্বশেষ বোর্ড সভা শেষে জানানো হয়, আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্স মার্শালকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দিচ্ছে বিসিবি। মঙ্গলবার বিসিবির কর্মকর্তা ও ক্রিকেটারদের সাথে ‘শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার’ নামক প্রোগ্রামে যোগ দেন আইসিসির সাবেক এই কর্মকর্তা। সেখানে সবার সাথে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে দুর্নীতি মুক্ত রাখতে কীভাবে কাজ করবেন সেসব নিয়ে। সেই সেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে, ৯ আগস্ট বাংলাদেশে আসা সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেশের ক্রিকেটকে পরিচ্ছন্ন রাখাই তার মূল লক্ষ্য। 

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের লবিতে দাঁড়িয়ে মার্শাল বলেন, ‘সব ধরনের হুমকি থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সুরক্ষিত রাখতে, বিসিবি সভাপতি ও বোর্ডের বাকিদের সাথে কাজ করতেই আমি এখানে এসেছি। প্রায় ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট শীর্ষে আছে। আমার মনে হয়ে এটাই সঠিক সময় ভক্ত-সমর্থকদের ভরসা জেতার। তাদের যেন মনে হয়, মাঠে যেটা দেখছে সেটাই আসল। নারী-পুরুষ যারাই খেলছে তার সবাই যেন সব ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষিত থাকে।’

প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বিপিএলের গত আসরে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ নিয়েও। বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে কীভাবে এসব থেকে মুক্ত রাখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে মার্শাল বললেন পেশাদারিত্বই শেষ কথা, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে পেশাদারিত্ব না থাকলে সেটাকে দেখতে দুর্বলই লাগবে। আর দুর্নীতিবাজরা এই সুযোগটাই নেবে।এসব অনেক দেশেই হয়েছে। বিপিএলও এর বাইরে না। আমাদের ইন্টেগ্রিটি ইউনিটটা যেন এসব থেকে বিপিএলকে রক্ষা করতে পারে, সেই চেষ্টাই থাকবে। 

জাতীয়তায় ইংরেজ এই ভদ্রলোক আরো বলেন, ‘বিশ্বের যেখানেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হোক না কেন, সেখানে এমনভাবে কিছু হুমকি আসে, তখন পুরো লিগটাকেউই মনে হয় দুর্বল। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে বিপিএলটাকে যেন এমন দুর্বল না দেখায়। দেখতে হবে টুর্নামেন্টের আর্থিক কাঠামো কেমন, মালিকানা কীভাবে দেয়া হচ্ছে,। সবই হতে হবে ভালোভাবে এবং পেশাদারভাবে।’ 

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের মূল উদ্দেশ্যে জানিয়ে মার্শাল বলেন, ‘আমরা একটি ইন্টেগ্রিটি ইউনিট গড়ে তুলব, যার মূল উদ্দেশ্য হবে সবাইকে এসব ব্যাপারে আরো জানানো, যাতে তারা বুঝতে পারে হুমকি কেমন হতে পারে এবং কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।  দুর্নীতিবাজদেরকে এখান থেকে তাড়ানো হবে। আমরা তাদের বাংলাদেশে চাই না, তারা দেশ থেকে বের হয়ে যাবে। ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের একটাই বার্তা, বাংলাদেশের ক্রিকেট হবে পরিচ্ছন্ন। আমাদের এই ভিশনকে পুরো সাপোর্ট করেছেন বোর্ড সভাপতি।’

বিসিবির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে আরো শক্তিশালী করতেই মূলত মার্শালকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে বোর্ড। কীভাবে কাজ করবে বিসিবির ইন্টেগ্রিটি ইউনিট, কেমন হবে কর্মপ্রক্রিয়া, কাঠামো; সবকিছু নিয়েই একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন মার্শাল। তিনি জানিয়েছেন, আগামী তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে এই ইউনিটের কাঠামো চূড়ান্ত করে ফেলবেন।

মার্শালের ভাষ্য অনুযায়ী, ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের মূল কাজ হবে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ক্রিকেট সম্পর্কিত সবাইকে এসব হুমকি ও প্রস্তাব থেকে কীভাবে রক্ষা পেতে হবে, সেসব সম্পর্কে আরো শিক্ষিত করা।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *