নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় নির্যাতনকারী ব্যক্তিদের চেহারা মনে রেখেছিলেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। জামিনে মুক্তির পর খাতায় সেই চেহারার স্কেচ আঁকেন তিনি। স্কেচগুলোর মধ্যে একটির সঙ্গে ডিজিএফআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান মিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন কিশোর।
কিশোরের অভিযোগ, ২০২০ সালে গ্রেপ্তারের পর তাকে নির্যাতন করেন আফিজুর। সোমবার দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে আফিজুরের গ্রেপ্তার দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও অভিযোগ করেন যে, সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা জামায়াতপন্থী সাংবাদিকদের সঙ্গে জড়িত।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হন কিশোর। সেসময় ১০ মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। ২০২১ সালের ৪ মার্চ জামিনে মুক্ত হন তিনি। বর্তমানে এই কার্টুনিস্ট দেশের বাইরে বসবাস করছেন।
ফেসবুক পোস্টে কিশোর লেখেন, ‘সম্প্রতি একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছি যিনি আমার অপহরণ ও নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে আমি বিশ্বাস করি। সেইসঙ্গে আমার প্রয়াত বন্ধু, লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট মুশতাক আহমেদের ওপর নির্যাতনের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সেই ব্যক্তি হলেন মেজর আফিজ।’
কয়েকদিন আগে এক বন্ধু কিশোরের নজরে আনেন ব্লগার, লেখক ও সাংবাদিক আরিফ জেবতিকের একটি পোস্ট। কিশোর বলেন, ‘সেই পোস্টে জেবতিক বলেছেন কীভাবে জনকণ্ঠ ভবন থেকে স্বাধীনতার পক্ষের ব্যক্তিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জামায়াতপন্থী সাংবাদিকদের নিয়ে সেই কাজটি করেছেন সাবেক মেজর আফিজুর।’
কিশোর বলেন, ‘জেবতিক এ সন্দেহের কথাও জানিয়েছেন যে আফিজ আমার এবং মুশতাক আহমেদের অপহরণ ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমি জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর স্মৃতির ওপর ভরসা করে যে দুটি ফরেনসিক স্কেচ করেছিলাম তা শেয়ার করেছি। যেখানে আমার দুই নির্যাতনকারীর ছবি এঁকেছি। স্কেচগুলির মধ্যে একটির সঙ্গে আফিজের চেহারার ভীষণ মিল রয়েছে।’
সন্দেহের কথা মাথায় আসতেই নিজের মতো করে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন জানিয়ে কিশোর বলেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইনের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের অপহরণের সঙ্গে পলাতক ডিজিএফআই প্রধান সাইফুল আলমের যোগসূত্র ছিল। আমার অনুসন্ধান সঠিক হলে, ২০২০ সালে আফিজুর ডিজিএফআইয়ের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য ছিলেন এবং কর্নেল শাম্মী ফিরোজের অধীনে দীর্ঘদিন ধরে মুশতাক আহমেদের ওপর নজরদারি করছিলেন।’
আফিজ আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারে ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও অভিযোগ কিশোরের। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ পলাতক ব্যবসায়ী নাফিজ শরাফতেরও কাছের লোক ছিলেন তিনি।
কিশোর আরও বলেন, ‘এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সেই আফিস একটি প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউজ দখলের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। যা তিনি অর্জন করেছেন মুশতাক আহমেদ, আমার এবং এরকম অগণিত মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে।’
কার্টুনিস্ট বলেন, ‘অনুসন্ধানে দেখতে পেয়েছি, আফিজের বাবা একসময় বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীর এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।’
‘দুর্নীতিগ্রস্ত ও সুবিধাবাদী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মক্ষেত্রে তার দুর্নাম আছে। আমি অবিলম্বে আফিজুরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে গুম, নির্যাতনসহ অসংখ্য মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যাবে।’
জামিনে মুক্ত হয়ে ২০২১ সালের ১০ মার্চ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন কিশোর। সেখানে তার ওপর নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়।