ভৈরব নদ দখল-দূষণ: ২৪ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত, ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়

3 Min Read
এক সময়ের খরস্রোতা ভৈরব নদ এখন ময়লার স্তুপ। যশোর পৌর এলাকা থেকে তোল। ছবি:টাইমস

যশোরের একসময়ের খরস্রোতা ভৈরব নদ এখন দূষণ ও অবৈধ দখলে মৃতপ্রায়। দফায় দফায় সতর্কীকরণ, মামলা বা জরিমানা সত্ত্বেও দূষণের মাত্রা বাড়ছেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৪টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি এই দূষণের জন্য দায়ী। তবে তাদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২৪টি দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: যশোর পৌর এলাকার কুইন্স হাসপাতাল, অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কিংস হাসপাতাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবজোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা নার্সিং হোম, অর্থোপেডিক হাসপাতাল, ইউনিক হাসপাতাল, ওরিয়ন হোটেল ইন্টারন্যাশনাল, ভৈরব হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, দড়াটানা হসপিটাল, একতা হসপিটাল, মডার্ণ হসপিটাল, রেনেসা হসপিটাল, প্রিন্স ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আলট্রাভিশন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্ক্যান হসপিটাল এবং দেশ ক্লিনিক।

এদের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানকে কয়েকদফা নোটিশ ও ৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

বারীনগর ও নওয়াপাড়া এলাকায় ভৈরব নদ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এস কে অটো রাইস মিল, ফয়সাল জিলেটিন, পালস ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং জারবান ফাইবার্স লিমিটেড। এরমধ্যে পালস ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা ও আরোগ্য সদন হাসপাতালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ভৈরব নদের শহর ভাগের দড়াটানা ও বারান্দীপাড়া ব্রিজ এলাকার পানি পরীক্ষা করে ভয়াবহ দূষণের তথ্য পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির যশোর জেলার উপপরিচালক এমদাদুল হক টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, ওইসব এলাকার পানিতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট রয়েছে, যার ফলে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। একই সাথে, ভৈরব নদের পাড়ে বসবাসকারী মানুষদেরও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

এমদাদুল হকের দেয়া তথ্য মতে, দড়াটানা পয়েন্টে ডিজলভ অক্সিজেনের (ডিও) মান পাওয়া গেছে ৩.৮১ শতাংশ, যেখানে স্বাভাবিক মান ৫ এর অধিক। বারান্দীপাড়া ব্রিজ পয়েন্টে এই মান ৪.৬৯ শতাংশ। অন্যদিকে, জৈব রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে; দড়াটানা পয়েন্টে এর মান ৯ এবং বারান্দীপাড়া ব্রিজ পয়েন্টে ১০, যেখানে স্বাভাবিক মান ৬ এর নিচে থাকে।

সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের শুধু নোটিশ বা ছোট আকারের জরিমানা, ‘‘রোগ নিরাময়ের’’ চেয়ে ‘‘উপশম’’ মাত্র। অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকলেও, সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এছাড়াও, ইটিপি স্থাপনের জন্য চিঠি দেয়া হলেও, নিয়মিত তদারকির অভাব রয়েছে।

পৌর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘দু’একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা কিংবা মামলা করে কোন লাভ হবে না। সময় এসেছে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার। ’

ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘ বিভিন্ন সময় ভৈরব নদ সংস্কারের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের বেশিরভাগের ফলাফলই হতাশাজনক। ’

নদকে ঘিরে চলমান দখলদারিত্ব ও দূষণ রোধে স্থানীয় প্রশাসনকেও আরও কঠোর হবার আহ্বান জানান তিনি।

যশোরের ভৈরব নদ কেবল একটি জলধারা নয়, এটি এই অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। খুলনা ও যশোর অঞ্চলের দীর্ঘতম এই নদ একসময় পদ্মার একটি স্রোতধারা ছিল।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *