মুরাদনগরে ধর্ষণের পেছনে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব, ইমো বার্তায় ‘মব প্ল্যান’

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
কুমিল্লার বুড়িচংয়ের কাবিলা বাজার থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে শাহ পরাণকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ছবি- র‌্যাবের সৌজন্যে
Highlights
  • র‍্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ বলেন, ‘শাহ পরান মবটা প্ল্যান করে ইমোর মাধ্যমে একটা মেসেজ দেয়, মেসেজটা আমাদের কাছে আছে। ওই মেসেজে বলা হয়েছিল “ওইদিন যাবে, তোমরা কি তাকে এরকম করতে চাও কি-না”।

কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী ধর্ষণের মূল আসামি ফজর আলীকে শায়েস্তা করতে তারই ছোট ভাই শাহ পরান ইমো বার্তায় ‘মব তৈরি’ করে ভিডিও ছড়ান।

বুড়িচং এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন শাহ পরান। র‌্যাব বলছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সঙ্গীরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে নির্যাতীতা ওই নারীকে শারীরিক নির্যাতন করে আশালীন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে শুক্রবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘শাহ পরান ও ফজর আলী– দুই ভাই মিলে ভূক্তভোগীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছিলেন। পরে এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এর সমাধানে মাস দুয়েক আগে একটি গ্রাম্য সালিশে শাহ পরানকে হেনস্তা ও মারধর করেন ফজর আলী। বড় ভাইয়ের ওপর এর প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করে সে।’

তিনি জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে ভুক্তভোগীর বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে সুদের টাকা আদায়ের অজুহাতে ফজর আলী ভুক্তভোগীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করে ধর্ষন করে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, এর ২০ মিনিট পর ভুক্তভোগীর বাড়ির আশপাশে অবস্থান করা মামলার মূল হোতা শাহ পরান ও একই গ্রামের আবুল কালাম, অনিক, আরিফ, সুমন, রমজান এবং অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি দরজা ভেঙে ভুক্তভোগীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করে এবং ভুক্তভোগীকে শারীরিক নির্যাতন, শ্লীলতাহানী ও আশালীন ভিডিও চিত্র ধারণ করে পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।’

র‍্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন বলেন, ‘ঘটনার পর মূল হোতা শাহ পরানসহ আবুল কালাম ও অন্যান্য আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামি শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, পূর্ব শত্রুতার কারণে তার ভাই ফজর আলীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য আসামিদের সহায়তায় ওইসব অপরাধ করেছেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘মবটা যারা করেছে, যারা ফেসবুকে ওই ভিডিও ভাইরাল করেছে, তাদের কয়েকজন ধরা পড়লেও এর মূল হোতা শাহ পরান এতোদিন ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অবস্থান নিশ্চিত জেনে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ বলেন, ‘শাহ পরান মবটা প্ল্যান করে ইমোর মাধ্যমে একটা মেসেজ দেয়, মেসেজটা আমাদের কাছে আছে। ওই মেসেজে বলা হয়েছিল “ওইদিন যাবে, তোমরা কি তাকে এরকম করতে চাও কি-না”। যাকে মেসেজটা দেওয়া হয়েছে, তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি, এ কারণে তার নাম-পরিচয় র‍্যাব প্রকাশ করেনি।

শাহ পরানের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে র‍্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ বলেন, ‘অপরাধ অপরাধই, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচ্য বিষয় না। তিনি পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’

ভিডিওটা কে ধারণ করেছিলেন এবং কে ছড়িয়ে দিয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। এখনও কয়েকজন গ্রেপ্তারের বাকি আছে।’

গত রোববার কুমিল্লা জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৬ জুন রাতে মুরাদনগরে একটি গ্রামে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি আটক ও পিটুনির শিকার হয়। পরে ফজর সেখান থেকে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থলে কিছু ব্যক্তি ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। পরে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ‘আইনানুগ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করে।

গত ২৬ জুন রাতে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন বাহেরচর গ্রামে এক নারীকে নিগ্রহের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় গত ২৯ জুন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ফজর আলী ও শাহ পরান–দুইভাইসহ ধর্ষণে অভিযুক্তসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *