দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলেছে, দুই দফায় পাল্টে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতিও। কিন্তু মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার গড়ে ওঠা সাম্রাজ্যে কেউ টোকাও দিতে পারেনি। নেপথ্যে ছিলেন বিসিবির ক্ষমতাধর পরিচালক ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম। তার ছত্রছায়ায় দিনে দিনে গামিনি এতই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন যে, ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার নিয়ে হুমকিধামকি দিতে, তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করতেও দুইবার ভাবতেন না। মূল যে কাজ, হোম অফ ক্রিকেটের উইকেটের মান বাড়ানো, সেটাতেও বারবার সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোনো বোর্ডের আমলেই তাকে সরানো যায়নি।
তবে অবশেষে সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবসান ঘটতে যাচ্ছে গামিনি অধ্যায়ের। ১৫ বছর পর তাকে বাদ দেয়ার গুঞ্জন উঠেছে বিসিবিতে। সম্ভবত বলতে হচ্ছে, কারণ এক বছর চুক্তি নবায়ন করা গামিনিকে বাদ দেয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বোর্ড। যদিও অস্ট্রেলিয়ার পিচ কিউরেটর ও এডুকেটর টনি হেমিংকে ‘হেড অফ টার্ফ ম্যানেজমেন্ট’ পদে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। যার দায়িত্ব থাকবে দেশের সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর উইকেটের মানোন্নয়ন করা ও দেশি কিউরেটরদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা।
এর আগেও একবার বিসিবিতে কাজ করেছেন হেমিং। ২০২৩ সালে এসেছিলেন কিউরেটর হয়ে। কিন্তু চুক্তির মাঝপথেই চাকরি ছেড়ে চলে যান পাকিস্তানে, অভিমান ও আক্ষেপ নিয়ে। একটি স্থানীয় ইংরেজি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে সরাসরি মাফিয়া বলেছিলেন মাহবুব আনামকে। বিসিবির এই পরিচালক এখনো আছেন একই দায়িত্বে। তবে হেমিংয়ের সেই অস্বস্ত্বি আর নেই বলেই মনে করছেন বিসিবি পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু।
শনিবার রাতে বোর্ড সভা শেষে ইফতেখার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘টনি হেমিংয়ের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। টার্ফ ম্যানেজমেন্ট নামে আমরা একটি আলাদা ইউনিট বানাচ্ছি। সেটির প্রধান হিসেবে কাজ করবে সে। আমাদের যত আন্তর্জাতিক ভেন্যু আছে, সবগুলো সে দেখভাল করবে এবং সব মাঠের কিউরেটররা তার তত্ত্বাবধানে থাকবে। পিচগুলোর উন্নতি বলুন, রিলেয়িং বলুন, তার তত্ত্বাবধানেই হবে।’
পিসিবির চিফ কিউরেটরের পদ ছেড়ে হেমিং বাংলাদেশে এসেছেন শনিবার। দায়িত্ব বুঝে নিতে রবিবার গিয়েছেন মিরপুর স্টেডিয়ামে। এদিকে গামিনিও ছুটিতে গেছেন শ্রীলংকায়। দুইয়ে মিলে গামিনির বিদায় ঘণ্টাও শুনতে পাচ্ছেন অনেকে। যদিও গামিনিকে বাদ দেয়ার কথা সরাসরি বলেননি ইফতেখার রহমান, ‘সময়ই বলবে, গামিনি থাকছেন নাকি থাকছেন না। এখন যে ব্যাপারটি হয়েছে, গামিনির চুক্তি এক বছর বাড়ানো হয়েছে। তাকে বরখাস্ত করতে হলে দুই মাস আগে নোটিশ দিতে হবে। আজকেই তো টনি হেমিং এসেছে, গামিনিকে নিয়ে এখনই বলা কঠিন।’
গামিনিকে সরানোর হাওয়া বইতে শুরু করেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজের পর। সিরিজটা বাংলাদেশ জিতেছে ঠিকই, কিন্তু উইকেট নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল চরমে। ক্রিকেটার, হেড কোচ থেকে শুরু করে বোর্ড পরিচালক; কেউই খুশি ছিলেন না তার ওপর। সামনে আসছে এশিয়া কাপ, এমন লো বাউন্সের উইকেটে ম্যাচ খেললে প্রস্তুতি আদর্শ হবে না, সেটা বলাই বাহুল্য।
কোনো রাখঢাক না রেখেই ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান, নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘টু বি অনেস্ট, পাকিস্তানের সাথে যে উইকেটে খেলা হয়েছে, উইকেটের কারণে খুবই অখুশি ছিলেন তিনি। আমরাও তাই। কারণ আমরা জানি, যেখানে খেলতে যাব সেখানকার উইকেটের জন্য এটা আদর্শ প্রিপারেশন না’।
মিরপুরের উইকেট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকবার, সমালোচনা হয়েছে তীব্র থেকে তীব্রতর। সাকিব আল হাসান একবার বলেছিলেন, এই উইকেটে খেললে ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে। এক বিপিএলে উইকেট নিয়ে কথা বলে জরিমানা পর্যন্ত গুনেছেন তামিম ইকবাল। দেশি-বিদেশি কোচ থেকে ক্রিকেটার; অনেকেই বলেছেন এই মাঠের উইকেটে আদর্শ নয়। তবুও বছরের পর বছর দাপটের সাথে মিরপুর স্টেডিয়ামে নিজের রাজ্য পরিচালনা করে গেছেন। বিসিবিও কোন এক জাদুবলে বারবার তার চুক্তি নবায়ন করেছে। যদিও অভিজ্ঞ হেমিংয়ের আগমনে দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছেন গামিনি। অপেক্ষা এবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার।