এক ম্যাচ হাতে রেখে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির ম্যাচ সেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাকের আলী অনিক বলেছিলেন, হোয়াইটওয়াশেই তাদের নজর। কিন্তু শেষ ম্যাচে একাদশে পাঁচ পরিবর্তন মাঠে নেমে তারা দেখলেন উল্টো চিত্র। হোয়াইটওয়াশ দূরে থাকুক, করতে হয়েছে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহে আটকে না যাওয়ার লড়াই। পাকিস্তানের দেয়া ১৭৯ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেমে ১০৪ রানে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। খেলতে পারল না পুরো ২০ ওভারও। লিটনদের ২০ বল আগে অল আউট করে ৭৪ রানে ম্যাচ জিতে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে সিরিজ শেষ করল পাকিস্তান।
১৭৯ রান তাড়া করতে নেমে ২৫ রানের মধ্যে প্রথম পাঁচ উইকেট হারালে ম্যাচে আর কী বাকি থাকে? উত্তর, হারের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কিছুই না। সাইফউদ্দিনেরর ব্যাটে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা এড়ানো গেলে এই ব্যাটিং ধসের ব্যাখা পাওয়া গেল না।১৫-তম ওভার পর্যন্ত ইনিংসে ছক্কা ছিল না একটিও। সাইফউদ্দিনের ব্যাটে ঘুচল সেই অভাব। সর্বোচ্চ দুটি জুটি ২৪ রানের, প্রথমটা সাইফউদ্দিনের সাথে টেইলএন্ডার নাসুম আহমেদের। দ্বিতীয়টি শরীফুলের।
অথচ এক ইনিংস আগেই দেদারসে পাওয়ার হিটিং করেছে পাকিস্তান। ওপেনিং জুটিতেই তুলেছে ৮২ রান। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে উল্টো পথে হাঁটল বাংলাদেশ। দলের সপ্তম ব্যাটার হিসেবে যখন নাঈম শেখ আউট হন, রান তখন ৩৪। সেখান থেকে ১০৪ পর্যন্ত দলের রান নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব পুরোটাই দুই ছক্কা, দুই চারে ৩৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলা সাইফউদ্দিনের।
মুলত সালমান মির্জার দুর্দান্ত এক স্পেলেই সর্বনাশ বাংলাদেশের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তানজিদ তামিম। নিজের তৃতীয় ওভারে তিন বলের ব্যবধানে উড়িয়েছেন জাকের আলী আর শেখ মাহেদী হাসানের স্টাম্প। বোলিং স্পেল শেষ করেছেন ৪ ওভারে ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। এর আগে লিটন দাস বোল্ড হয়েছেন ফাহিম আশরাফের দারুণ এক ইনসুইংগারে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে। সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মিরাজ দারুণ শটে দুই চারে ইনিংস শুরু করলেও উইকেট দিয়েছেন স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে। ফাহিমের ফুল লেংথে করা স্লোয়ার ডেলিভারি মিড অনের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ক্রস ব্যাটেড শটে ক্যাচ দিয়েছেন আব্বাস আফ্রিদির হাতে। সালমান আগার বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন শেষ ভরসা হয়ে থাকা শামীম পাটোয়ারী।
ওপেনিংয়ে নেমে ১৭ বলে ১০ রানের ইনিংসে নাঈম শেখ যেভাবে খাবি খেয়েছেন, এমন এপ্রোচ একজন টি-টোয়েন্টি ব্যাটারের কাছ থেকে কেউ আশা করে না। ডট বলের চাপে পড়ে আহমেদ দানিয়ালকে তুলে মারতে গিয়েছেন মিড অফের ওপর দিয়ে। এক্সট্টা বাউন্স আর ভুল শট সিলেকশনের মাশুল দিতে হলো তখনই। লফটেড সেই শটে বল পার হয়নি ইনার সার্কেলও। সিলি মিড অফে ক্যাচ ধরেছেন আগা সালমান। শেষ তিন ব্যাটারের দুজনেরই উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ নওয়াজ।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তান বুঝেছে, সাহিবজাদা ফারহানকে প্রথম দুই ম্যাচে বসিয়ে রাখাটা একদমই উচিত হয়নি তাদের। ইনিংসের তৃতীয় বলেই শেখ মাহেদীকে মেরেছেন স্লগ সুইপে দারুণ এক ছক্কা। এক বল ডট দিয়ে পরের বলে পুল করে চার। সেই যে শুরু তাণ্ডবের, থেমেছে ইনিংসের ১২তম ওভারে। দুই বছর পর টি-টোয়েন্টিতে ফেরা নাসুম আহমেদের দ্বিতীয় শিকার হয়ে আউট হওয়ার আগে পাঁচ ছক্কা, ছয় চারে খেলেছেন ৪১ বলে ৬৩ রানের ইনিংস।
তার এই ঝড়ো ইনিংসেই বড় সংগ্রহের ভিত পায় পাকিস্তান। মাঝে মোহাম্মদ হারিস, হাসান নওয়াজ, হুসাইন তালাতরা ব্যর্থ হওয়াতে হিসেব অনুসারে প্রত্যাশার চেয়ে কম রানেই আটকেছে তারা। তিন উইকেট নিলেও খরুচে ছিলেন তাসকিন। দুই উইকেট নেন নাসুম আহমেদ।