ঢাকার শেওড়াপাড়ায় নিহত গৃহবধূ ফাহমিদা তাহসিন কেয়ার মরদেহ নিয়ে মিরপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন তার স্বজনরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহতের মরদেহ নিয়ে মিরপুর থানার সামনে যান তারা। কেয়ার সন্তানদের তার মায়ের মরদেহ দেখতে না দেওয়া, আসামিদের গ্রেপ্তার না করাসহ পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেন স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা।
কেয়ার ফুপা সামসুদ্দোহা টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘কেয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে শুক্রবার দুপুর ২টায়। মরদেহ দাফনের জন্য নরসিংদীতে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। কিন্তু কেয়ার সন্তান সাদিয়া (১১), সাঈদ (৭), সাজিদ (৫) ও দেড় বছরের সায়ানকে মরদেহের কাছে আসতে দেওয়া হয়নি।’
‘তাদের মিরপুর শামীম স্মরণির একটি বাসায় আটকে রাখা হয়েছে। কেয়ার ফুপু শাশুড়ি দীপা ভূঁইয়া মায়ের মরদেহ শেষবারের মতো সন্তানদের দেখতে দিচ্ছেন না। দীপা ভূঁইয়া হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
এছাড়া আরেক আসামি মাহাবুবও দীপা ভূঁইয়ার বাসায় রয়েছেন বলেও দাবি সামসুদ্দোহার।
কেয়ার সুরতহাল প্রতিবেদন লিখেছেন মিরপুর থানার এসআই রোকন। স্বজনরা বলেন, সেখানে লেখা হয়েছে ভিকটিম গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এই বক্তব্যের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে স্বজনরা বলছেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তা কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে ভিকটিম নিজেই গলায় ওড়না পেচিয়েছেন?
বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে কেয়ার মৃত্যু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার তার মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। যার প্রধান আসামি কেয়ার স্বামী সিফাত আলী (৩০)।
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলার কোনও আসামিই গ্রেপ্তার হয়নি, সন্তানদেরও মায়ের মরদেহ দেখতে দেওয়া হচ্ছে না এবং এসব ব্যাপারে পুলিশ কোনো সহযোগিতা করছে না বলেও অভিযোগ করেন থানার সামনে উপস্থিত কয়েকজন স্বজন।
তবে, সন্ধ্যায় পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিফাতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ রোমান দুপুরে বলেন, ‘কেয়ার মায়ের করা হত্যা মামলায় সিফাত ও তাদের গাড়িচালকসহ মোট নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
নিহত কেয়ার ফুফু সৈয়দা ফাতেমা জাহান কলি জানান, বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সিফাত তার শাশুড়ি নাজমা বেগমকে ফোন করে বলেন, ‘কেয়া খুবই অসুস্থ। আপনারা বাসায় আসেন।’
কী হয়েছে জানতে চাইলে সিফাত একপর্যায়ে বলেন, ‘কেয়া আর বেঁচে নেই’।
এর পর নাজমা বেগম স্বামীসহ শেওড়াপাড়ায় মেয়ের বাসায় পৌঁছান। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান, সিফাত আলী তার স্ত্রী কেয়াকে নিয়ে পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে যাচ্ছেন। তখন সিফাতের বন্ধু কাজী মারুফ, গৃহকর্মী মনির ও গাড়িচালক সঙ্গে ছিলেন।
হাসপাতালে পৌঁছার পর চিকিৎসকরা কেয়াকে মৃত ঘোষণা করলে সিফাতসহ অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে যান।