ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বুধবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বেসামরিক জনগণের জন্য ‘যুদ্ধ মহড়া’ (মক ড্রিল) চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে চলছে জোর প্রচারণা।
সরাসরি যুদ্ধ বাঁধলে সাধারণ জনগণ কিভাবে নিরাপদে থাকবেন, বিমান হামলা হলে কি করতে হবে, ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতিতে করণীয়, হতাহতদের উদ্ধার প্রক্রিয়া– এসবই থাকছে ‘যুদ্ধ মহড়া’। এরমধ্যে বিমান হামলার যুদ্ধ মহড়াকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। এই মহড়ায় প্রশিক্ষণ দেবেন সেনা, পুলিশ ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীরা।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ২৪৪টি এলাকায় বেসামরিক জনগণকে ‘যুদ্ধ মহড়া’র প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি এলাকাতেও হবে এই মহড়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার ডটকম জানিয়েছে, যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য সাধারণ মানুষকে প্রস্তুত করতেই এই মহড়ার আয়োজন করা হচ্ছে। বুধবার থেকে শুরু হওয়া মহড়ায় কী হবে, কোন কোন বিষয়ে জোর দেওয়া হবে, তা নিয়ে আগেই চালানো হয়েছে প্রচারণা। মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন জায়গায় ও বিভিন্ন স্কুলে এই মহড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
ভারত বুধবার রাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে অন্তত ৮ জন নিহত ও ২৫ আহত হন বলে খবরে প্রকাশ। অন্যদিকে, পাকিস্তানের দাবি, দেশটির পাল্টা প্রতিরোধ হামলায় ভূপতিত হয়েছে ৫টি ভারতীয় বিমান।
সুনির্দিষ্টভাবে কেবল নয়টি জঙ্গি আস্তানায় হামলার ভারত সরকারের দাবি অস্বীকার করে পাকিস্তান বলছে, যেসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো আসলে বেসামরিক এলাকা। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বাহাওয়ালপুর ও মুজাফফরাবাদ সংলগ্ন এলাকাগুলো সরেজমিন ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে।
গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহেলগামে এক বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহতের জেরে ভারত সরকার পাকিস্তানে ওই হামলা চালাল। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করে আসছে। পাকিস্তান অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করেছে এবং পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, ভারতই হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এই প্রেক্ষাপটে দুই পরমানু শক্তিধর দেশ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চলে ‘যুদ্ধ মহড়া’ চালিয়েছিল ভারত। এর ৫৩ বছর পর দেশটি আবারো এই মহড়া চালু করল।
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের সব রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, মূলত বিমান হামলা হলে কী ধরনের পদক্ষেপ করতে হবে তা শেখানো হবে সাধারণ মানুষকে। পুলিশ, সেনা ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীরা শেখাবেন এই ‘যুদ্ধ মহড়া’।
এ মহড়া নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যগুলোর স্বরাষ্ট্রসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন। সেই ভার্চুয়াল বৈঠকে ছিলেন বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্তারাও। বুধবারের মহড়া নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হয় সেই বৈঠকে। কী কী করণীয়, তা নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানে বন্ধ অনেক স্কুল-কলেজ
এদিকে, বুধবার রাতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জেরে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পাকিস্তানের একাধিক অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব প্রদেশজুড়ে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। পাঞ্জাবে ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
খবরে প্রকাশ, ভারত-শাসিত কাশ্মীরের জম্মু, সাম্বা, কাথুয়া, রাজৌরি ও পুঞ্চ অঞ্চলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুধবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী ভিম্বার গলি এলাকায় মর্টার ও গোলা নিক্ষেপ করেছে পাকিস্তান। ওই এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।