মুজিব বর্ষ উদযাপনে সরকারি তহবিল তছরুপে এশিয়াটিকের দুর্নীতির সম্পৃক্ততার অভিযোগসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কাজে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এর মধ্যে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র মুজিব: একটি জাতির রূপকার-এর নির্মাণও রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. সাব্বির ইবনে আজম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ইসা ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
এর আগে, মুজিববর্ষ উদযাপনে সরকারি তহবিল তছরুপে এশিয়াটিকের দুর্নীতির সম্পৃক্ততার অভিযোগসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির তদন্ত করতে রিট করা হয়।
রিটে অভিযোগ করা হয়, একাধিক মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার নেতৃত্বে পরিচালিত মুজিব বর্ষ উদ্যাপন কর্মসূচিতে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল।

আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রকল্পের ব্যয়, ক্রয় প্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা সংক্রান্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) সকল প্রকল্পের ব্যাপক অডিট করার আদেশও দেন।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, মুজিব শতবর্ষ উদযাপনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ অন্তত ১৬টি মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভাগ কোটি কোটি টাকার প্রকল্প, অনুষ্ঠান ও প্রচার অভিযান পরিচালনা করে।
এতে আরও দাবি করা হয়, এসব কার্যক্রমের অনেকগুলোতেই অস্বাভাবিক বাজেট, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ এবং অনিয়মিতভাবে চুক্তি প্রদান করা হয়েছে।
রিটে ২০২৪ সালে ১৬ বছরে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থ, আইসিটি, বিদ্যুৎ, তথ্যসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের টেন্ডার রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মিডিয়ায় একচেটিয়া লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়।
রিটে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের মদদে সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন কথিত উন্নয়নের ক্যাম্পেইন, বিজ্ঞাপন বানানো ও দেশে বিদেশে প্রচার করা হয়
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকাল ৪টা পর্যন্ত এশিয়াটিকের এমবিএ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন সময় টিভি, একাত্তর টিভি, যমুনা টিভিসহ বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত হয়।
এছাড়া মুজিব সিনে

মা বিশ্বব্যাপী প্রচারণার কাজে সিআরআই ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সরাসরি হস্তক্ষেপে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বীমা ও দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে শত-শত কোটি টাকা উত্তোলন করা হয় বলেও রিটে বলা হয়।
রিটে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রচারণার কাজে বিদেশে এশিয়াটিক এফজেডই নামে পৃথক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। দেশ থেকে বিপুল টাকা পাচারের মাধ্যমে বিদেশি মিডিয়ায় মুজিব সিনেমার ব্যাপক প্রচার কাজ করে এশিয়াটিক গ্রুপের মাইন্ডশেয়ার ও ফোরথট পিআর।
আইনজীবী বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপনের বাজেট একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ নেয় এশিয়াটিক গ্রুপ।
চলতি বছরের ২৩ প্রকাশিত ‘নুর-যাকের পরিবারের দখলে বিজ্ঞাপন বাজার’ শিরোনামের প্রতিবেদনে সাবেক তথ্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের সম্পৃক্ততার কথা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ওই প্রতিবেদনটি এই মামলার অন্যতম রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়।