মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো চার বাংলাদেশিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
আসামিরা হলেন—নজরুল ইসলাম সোহাগ, মো. রেদওয়ানুল ইসলাম, জাহিদ আহমেদ ও মাহফুজ। তারা উগ্রবাদী নেটওয়ার্ক ইসলামিক স্টেট (আইএস) -এর অনুসারী বলে অভিযোগ তুলে মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান শুনানি শেষে এই রিমান্ডের আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন।
আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক এস এম বখতিয়ার খালেদ এ তথ্য টাইমস অব বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেন।
রিমান্ড শুনানি থাকায় ৪ আসামিকে মঙ্গলবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক কে এম তারিকুল ইসলাম বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন।
পুলিশের দাবি, মালয়েশিয়া ফেরত ৪ আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দেশের বাইরে থেকে তারা অনলাইনের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও চাঁদা আদায়সহ নানা তৎপরতা চালাতেন। বাংলাদেশে ফিরে তাদের কেউ কেউ ‘উগ্রবাদী তৎপরতা’ চালাতে পারেন বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। আসামিরা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ, উগ্রবাদী কনটেন্ট প্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এমদাদুল হক বিজয় রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেক আসামির চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, ঢাকার বিমানবন্দর থানায় ৫ জুলাই দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ‘আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনের’ মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিলেন। তারা অনলাইনে বাংলাদেশিদের ধর্মীয় উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে সদস্য সংগ্রহ, চাঁদা আদায় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন। তাদের তহবিল সংগ্রহ পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। তারা বছরে ৫০০ রিঙ্গিত করে চাঁদা দিতেন সংগঠনে। এই অর্থ সংগৃহীত হতো ‘স্বেচ্ছা অনুদানের’ মাধ্যমে, যা পরে আন্তর্জাতিক ই-ওয়ালেট ও মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো।
আসামি তালিকায় থাকা ৩৫ জনের মধ্যে রয়েছেন- পারভেজ মাহমুদ পাবেল, শরীফ উদ্দিন, রহমান মোহাম্মদ হাবিবুর, সালেহ আহমেদ, মো. আব্দুস সহিদ মিয়া, মো. মতিন, ফয়সাল আলম, রায়হান আহমেদ, মো. রাজ, মো. মনসুরুল হক, ইমন মহিদুজ্জামান, আকরাম মো. ওয়াসিম, শেখ সালাম, মো. রাজ মাহমুদ মন্ডল, আশরাফুল ইসলাম, মো. ফয়সাল উদ্দিন, রবিউল হাসান, মো. সোহেল রানা, মো. আফসার ভূঁইয়া, হোসাইন সাহেদ, মো. আশিকুর বিশ্বাস, মো. শাওন শেখ, ইয়াসিন আলী, মো. পারভেজ মোশারফ, মহিউদ্দিন, সাব্বির হোসাইন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাকিল মিয়া, আসাদুজ্জামান হোসাইন এবং মো. সোহাগ রানা।
আসামিদের মধ্যে কয়েকজনকে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, অন্যরা সেখানে আটক আছেন।
গত ৪ জুলাই মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইএস-সম্পৃক্ততার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করে। এর মধ্যে তিনজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে ঢাকায় পৌঁছানোর পর তাদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী গ্রেপ্তার দেখানো হয়। চতুর্থ আসামি মাহফুজকে পরে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।