বিপৎসীমার ১৮ সে.মি ওপরে তিস্তা, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

টাইমস ন্যাশনাল
5 Min Read
তিস্তার প্লাবনে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। ছবি: টাইমস

পাহাড় ও সমতলে ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫২.১৫) ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে বেলায়  ১২টায় বিপৎসীমার (৫২.২২) ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বুধবার একই পয়েন্টে একই সময় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে ১২ ঘন্টা পর সন্ধ্যা ৬ টায় পানি কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।

স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যেই, তিস্তা অববাহিকার ১৫২ কিলোমিটার এবং ধরলা-ব্রহ্মপুত্র অঞ্চলে ৩৬০ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চর অঞ্চল এবং নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। এসব এলাকার চিনাবাদাম, পাট এবং নতুন করে রোপন করা আমন ধানের হাজার হাজার হেক্টর জমি পানিতে ডুবে গেছে। অনেক পুকুর প্লাবিত হওয়ার পথে। নদীর তীরবর্তী ভাঙনও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। ভেঙে গেছে চর এলাকার রাস্তাঘাট ও সেতু। পানিতে আটকে পড়া পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ এবং গৃহপালিত প্রাণিদের নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া শুকনো খাবারই তাদের একমাত্র ভরসা । এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং শৌচাগারের সমস্যাও দেখা দিয়েছে।

বিপৎসীমার ওপরে বইছে তিস্তা, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। ছবি: টাইমস

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়ে ২০০.০, রংপুরে ২১.৪ এবং উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ১০.৫ এবং আসামের গুয়াহাটিতে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও, আগামী ২৪ ঘন্টায় দেশের রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগ এবং তৎসংলগ্ন উজানে পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় এবং ভারতের অরুণাচল প্রদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা আরও জানান, গজলডোবার সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং পাহাড়ি ঢালের উজানে পানির স্তর বেড়ে যাওয়া ছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতে ক্রমাগত ভারী বৃষ্টির কারণে পানি বাড়ছে। তিস্তার নিম্নাঞ্চলে পাঁচটি জেলার ১৪টি উপজেলায় পানি বেড়েছে। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনেশ্বরী, টাঙ্গন, পুনর্ভবা, ইছামতি নদীর নিম্নাঞ্চলের চর এলাকা এবং গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও, তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে চলে যাওয়ায় নদী-তীরবর্তী বাঁধে আঘাত লাগার ফলে নানা জায়গায় ভেঙে যাওয়ার শংঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাপ সামলাতে ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি জলের গেট খোলা হয়েছে।

পাউবো’র উত্তরাঞ্চলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিস্তা, ধরলা এবং দুধকুমার নদীর পানির স্তরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তখন নদী তীরের আরও অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। পাহাড়ি এলাকা এবং ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এই অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যা দেখা দেবে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত।’

বিপৎসীমার ওপরে বইছে তিস্তা, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত। ছবি: টাইমস

ইতোমধ্যেই এ নদী অববাহিকার চর ও নিচু এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। বাসাবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন তারা। চর এবং নিম্নাঞ্চলের মানুষ তাদের গবাদি পশু এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন।

পাউবো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ যৌথভাবে জানিয়েছে, তিস্তার পানি বাড়াতে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম, কালিগঞ্জ এবং আদিতমারীর নদী-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লালমনিরহাট, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জও প্লাবিত হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে এই ৫ জেলার চর এলাকার ২২৫টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তা ও ধরলা সহ এই অঞ্চলের অববাহিকায় কমপক্ষে ১০৮টি স্থানে ছোট-বড় ভাঙন দেখা গেছে। পাউবো অনেক জায়গায় ভাঙন রোধে কাজ করছে।

বিপৎসীমার ওপরে বইছে তিস্তা। ছবি: টাইমস

এ নিয়ে উত্তরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘যেসব স্থানে ধস নেমেছে, সেসব স্থানে জরুরি কাজ করা হচ্ছে। যদি সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি স্থাপনা থাকে, তাহলে সেইসব স্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক নদীর তীর পর্যবেক্ষণ করছেন।’

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে তিস্তার পানির স্তর বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জেলার নদীতে পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, উপজেলা ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত পানিতে আটকে পড়াদের উঁচু স্থানে বা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। পানিতে আটকে পড়া মানুষদের তাৎক্ষণিকভাবে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

 

 

 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *