রাশিয়ায় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৭তম আসরে দেখানো হলো বাংলাদেশের ‘মাস্তুল’। এটি ছিল ছবিটির আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার। অংশ নিয়েছেন পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, চিত্রগ্রাহক মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান, সিনেমার প্রধান দুই অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু ও দীপক সুমন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে দেখানো হয় ‘মাস্তুল’। আগের দিন (২১ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ছিল এ সিনেমা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক ও সমালোচকদের মুখোমুখি হয়েছে এর টিম।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সমাপনী অনুষ্ঠানের পর রাত ১১টায় রয়েছে ‘মাস্তুলের’ আরেকটি প্রদর্শনী। এর গল্প জাহাজের নাবিক ও তাদের ভাসমান বাস্তবতাকে ঘিরে আবর্তিত। ছবির প্রায় পুরো দৃশ্যধারণ হয়েছে জাহাজের ভেতর। জাহাজের বাবুর্চির চরিত্রে অভিনয় করছেন ফজলুর রহমান বাবু। অন্যান্য চরিত্রে আছেন আমিনুর রহমান মুকুল, আরিফ হাসান, সিকদার মুকিত, জুলফিকার চঞ্চল, সিফাত বন্যা, দুলাল ও লিটু মোল্লা। ‘মাস্তুলের’ কাস্টিং ডিরেক্টর যুবরাজ শামীম।
উৎসবে যোগ দিতে ২০ এপ্রিল রাতে ঢাকা থেকে রওনা হন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। সহযাত্রীদের সঙ্গে তোলা একটি স্থিরচিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান লিখেছেন, ‘টিম ‘মাস্তুল’ এখন মস্কোতে। চমৎকার সব অভিজ্ঞতার স্মৃতি জড়ো হচ্ছে মস্কো আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে।’

মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, ‘মস্কোর মতো একটি প্রাচীন আন্তর্জাতিক উৎসবে নির্বাচিত হওয়া শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্যও গর্বের।’
‘আন্তর্জাতিক দর্শকরা এই গল্প দেখে ভিন্ন অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন নিশ্চয়ই’, আশা প্রকাশ তার।
এবারের মস্কো উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে ১৭ এপ্রিল। আট দিনের এই আয়োজনের পর্দা নামবে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল)।

মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের যাত্রা শুরু ১৯৩৫ সালে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম চলচ্চিত্র উৎসব। ১৯৫৯ সাল থেকে হয়ে আসছে এ উৎসব। আর ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর হচ্ছে এ আয়োজন।
মস্কোর ৪৪তম আসরে যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’, ৪৫তম আসরে নূরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’ ও ৪৬তম আসরে আসিফ ইসলামের ‘নির্বাণ’ নির্বাচিত হয়। তারও আগে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ ও ‘শনিবার বিকেল’ এবং জসীম আহমেদ প্রযোজিত ও ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘মায়ার জঞ্জাল’ মস্কোতে প্রদর্শিত হয়েছে।
এরমধ্যে ‘আদিম’ দুটি বিভাগে ও ‘নির্বাণ’ একটি বিভাগে পেয়েছে পুরস্কার।

মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এর আগে ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ নির্মাণ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এবার ‘মাস্তুল’ বানিয়ে বৈশ্বিক মঞ্চে জায়গা করে নিলেন এই নির্মাতা। পরিচালনা ও প্রযোজনার পাশাপাশি কাহিনি ও চিত্রনাট্য রচনা, সম্পাদনা ও শব্দসজ্জা করেছেন তিনি নিজেই। ছবিটির ইংরেজি নাম ‘বেয়ন্ড দ্য মাস্ট’।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছবিটির প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, “আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। ছোটবেলা থেকেই নদীবন্দর এলাকার জাহাজীদের দেখে আসছি। ডাঙ্গার সঙ্গে জলে ভাসা এসব মানুষের সম্পর্ক আর তাদের বিচিত্র জীবন আমাকে বরাবরই টানত। ‘মাস্তুল’ সেই জীবনচিত্র ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করার সুযোগ এনে দিলো।”
গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে কোনো কর্তন ছাড়াই ছাড়পত্র পেয়েছে ‘মাস্তুল’। এটি ইউ সার্টিফিকেট পাওয়ায় সব বয়সী দর্শকরা দেখতে পারবেন।