ফেনীতে বন্যায় দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি, কৃষি খাত বিপর্যস্ত

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। ছবি: টাইমস

টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সব গ্রাম থেকে পানি নেমে গেছে। তবে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন।

জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক তথ্যমতে, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও বসতবাড়ি। তবে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

জেলা প্রশাসনের হিসাবে দেখা গেছে, তিন শতাধিক কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১২৬টি গ্রামীণ সড়ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৯০ কোটি টাকার বেশি। শতাধিক বাড়িঘর আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি খাতে ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। মৎস্য খাতে জেলার ছয়টি উপজেলায় ২ হাজার ৩৩০টি পুকুর, দীঘি ও খামার ভেসে গেছে, যার ক্ষতি প্রায় ৮ কোটি টাকা।

পরশুরামের ধনীকুন্ডা গ্রামের কৃষক গোলাম রহমান বলেন, ‘৫ বিঘা জমিতে শাকসবজি চাষ করেছিলাম। সবকিছু পানির নিচে নষ্ট হয়ে গেছে। বছর না ঘুরতেই আবার বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, ‘অনেক এলাকায় এখনো পানি রয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষতির প্রকৃত হিসাব জানা যাবে। আমরা ইতোমধ্যে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য প্রণোদনার প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’

ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নের মাছচাষি মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। দুটি বড় প্রজেক্টে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ ছিল। বানের পানি আসতে আসতে অর্ধেক মাছ রক্ষা করতে পেরেছি, বাকিগুলো ভেসে গেছে। এবারের বন্যায় বড় ভরাডুবি খেয়েছি।’

ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের প্রণোদনার তালিকা সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’

প্রাণিসম্পদ খাতে বড় ক্ষতির কথা জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বন্যায় খামারগুলোতে প্রচুর প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। সরকারি সহায়তা বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’

ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। ফাইল ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘দেড়পাড়া ও আশপাশের এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। তবে সবগুলো মেরামতে কিছুটা সময় লাগবে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ফেনী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক জানান, নদীর বাঁধ ভেঙে সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ১২৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজীতে ১০০ কিলোমিটার ও পরশুরামে ২০ কিলোমিটার। তিনি বলেন, ‘ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।’

এর আগে ৮ জুলাই মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪১টি অংশ ভেঙে জেলার পাঁচটি উপজেলার এক লাখেরও বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হয়।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *