ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার্ত বেদেপল্লীর ৪৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশুর স্থানীয় সরকারি পাইলট হাইস্কুলের সামান্য আশ্রয়টুকুও ঘুচেছে। বিজয়পুর রেলস্টেশন সংলগ্ন স্কুলটিতে দিন পাঁচেক আগে তারা ঠাঁই নিয়েছিলেন।
একে বেদের যাযাবর জীবন, তায় বন্যা এসে ভাসিয়েছে ঝুপড়ি বস্তির ছাউনিটুকুও। তবু ওই স্কুল ঘরে পাকা ছাদ ও শুকনো আশ্রয়টুকু ঘিরেই তারা সাজিয়েছিলেন কয়েকদিনের অস্থায়ী সংসার। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের মুখে তুলে দিচ্ছিলেন ত্রাণে পাওয়া সামান্য আহার। কিন্তু এইটুকুও যেন কাপালে নেই, এমনই অভাগা জীবন!
শনিবার বেলা ১২টার দিকে স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সামান্য যা ঘটিবাটি আছে, তাই বাঁধাছাদা করছেন মাঝ বয়সী এক বেদে নারী। দারুণ ক্ষোভে কথাই বলা যায় না তার সাথে, এমন অবস্থা!

তবু এর ভেতরেই জানা গেল, বিকাল ৪টার মধ্যে স্কুল ছাড়তে হবে, এমন নোটিশ দেওয়া হয়েছে তাদের। রোববার স্কুলের পরীক্ষা থাকায় মৌখিক এই উচ্ছেদ আদেশ।
দুর্গত বেদেদের প্রশ্ন, তারা এখন যাবেন কোথায়? খাবেন কী?
দেখা গেল, আশ্রয়কেন্দ্রের পাততাড়ি গুটানোর তাড়ায় স্কুলের বারান্দায় তখনই বাবার সাথে দুপুরের আহার সেরে নিচ্ছিল দুই ভাইবোন। বাবার মুখে যেন মেঘের অন্ধকার। কিশোর ছেলেটির হাতে ভাতের থালা ও মাথায় প্লাস্টিকের মুখোশ তখনো বাঁধা।
আর আদুর গায়ে হলুদ ফিতেয় দুই বেনী করা ছোট্ট মেয়েটি ভাত খেতে খেতেই অস্ফুট স্বরে জানালো, তার নাম নাসিমা।
‘তোমরা কই যাইবা?’… এমন প্রশ্ন মনে এলেও করা শেষ পর্যন্ত করা যায়নি সংগত কারণেই।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে ফুলগাজীতে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৮৫টি গ্রাম। পাশাপাশি ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরে আরও হাজার হাজার মানুষ বন্যা আক্রান্ত। অধিকাংশ সড়ক ডুবে গেছে পানিতে। ফেনীর মূল সড়কও এখন কয়েক ফুট পানি নিচে। ফেনী, মুহুরি, কহুয়া ও সেলোনিয়া নদীর বাঁধ অন্তত ২০ জায়গায় ভেঙে পড়ায় তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ২০ হাজার মানুষ বিভিন্ন জরুরি আশ্রয়ে কেন্দ্রে আছেন।
তবে বাসিন্দারা জানান, প্রকৃত বানভাসীর সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে পানীয় জল, ওষুধ ও খাবারের তীব্র সংকট।
টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনী জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। প্লাবিত হয়েছে বসতবাড়ি, কৃষিজমি ও সড়কপথ।