প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও তার রোডম্যাপ দ্রুত প্রকাশের জোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনেরও দাবি জানান তারা।
শনিবার রাতে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক বিফ্রিংয়ে এসব কথা জানান।
নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার বিষয়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি প্রতিনিধি দল শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠকে বসে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির চার নেতার সঙ্গে শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে রাত ৮টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত।

ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য, বিএনপির দাবিসহ সম্প্রতি ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা’ বিষয়ে নানা গুঞ্জন চলাকালে শুক্রবার এ বৈঠক ডাকা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিফ্রিংয়ে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, বির্তকিত তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সংস্কার ও বিচার কাজ নিয়ে বিএনপি তাদের আগের অবস্থান তুলে ধরেছে। নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার আলাদা বিষয়, এর একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক নেই বলে জানান বিএনপি নেতারা।
খন্দকার মোশাররফ বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার কথা বললেও তাদের নাম প্রকাশ করেননি। যদিও এর আগে থেকেই বিএনপি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, মাহফুজুল আলম ও খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করে আসছে।
ব্রিফিংয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, যে কোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, আমরা মনে করি আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ জন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচারপ্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারে গেলে তা বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ জানান, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মঈন খান বলেন, ‘নির্বাচনের রোডম্যাপের ঘোষণা দেওয়া হলেই শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন সম্ভব বলে তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন।