উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তীব্র স্রোতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, ফলে তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ধুবনি এলাকায় একটি পুরনো বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় লোকালয়ে পানি ঢুকছে। তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই এসব অঞ্চলের জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
হাতীবান্ধায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ ৫২ দশমিক ২০ মিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়, যা স্বাভাবিক প্রবাহের (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) চেয়ে ৫ সেন্টিমিটার ওপরে।
স্থানীয়রা জানান, এদিন দুপুরের পর থেকেই পানি বাড়তে থাকে এবং বিকেলের দিকে স্রোতের গতি বেড়ে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে দ্রুত পানি ঢুকতে শুরু করে, ফলে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ভারতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় উজানের পানিতে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছিল এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তা অতিক্রম করে। পানিপ্রবাহ এখনও বাড়ছে, ফলে তিস্তা চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। চরাঞ্চলের সড়কপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, নৌকা বা ভেলায় চড়ে মানুষ যাতায়াত করছে। ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ধানের জমি ও অন্যান্য ফসলের ক্ষেত ডুবতে বসেছে, অনেক জলাশয় ডুবে মাছ ভেসে যাচ্ছে। তিস্তা নদীতীরবর্তী লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি আরও বাড়লে বড় বন্যার ঝুঁকি রয়েছে এ অঞ্চলে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, ‘উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে। যেভাবে পানি আসছে, তাতে বড় বন্যা হওয়ার ভয়ে আছি। এ বছর বড় কোন বন্যা এখনো হয়নি।’
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘নদীতীরবর্তী এলাকার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় শুকনো খাবারসহ ভাঙনকবলিতদের জন্য ঢেউটিন মজুত রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় সরকারিভাবে প্রস্তুতি রয়েছে।’