তবুও আশা বাংলাদেশের নতুন মিডল অর্ডারে

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
কামিন্দু মেন্ডিসের বলে বোল্ড তাওহিদ হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কত স্মৃতিই তো আছে বাংলাদেশের। নিদাহাস ট্রফিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছক্কায় জেতা ম্যাচ এখনো টি-টোয়েন্টির সেরা অর্জনের একটা। ২০২৩ এশিয়া কাপে ভারতে হারানোর গল্পও বেশি মলিন হয়নি। তবে বুধবার রাতে যা হলো সেটা বোধহয় মনে রাখতে চাইবেন না কেউই। শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে রান তাড়ায় নেমে মাত্র ৫ রান আর ২৩ বলের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ভুতুড়ে এই ব্যাটিং ধসের পর প্রথম ম্যাচ হারতে হয়েছে ৭৭ রানের ব্যবধানে। এই ব্যর্থতার দায় পুরোটাই বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটারদের।

প্রেমাদাসাতে বাংলাদেশের এই ওয়ানডেটা হতে পারত যুগ বদলের সাক্ষী। কারণ গত ২০ বছরে প্রথমবার বাংলাদেশ খেলতে নামে ‘পঞ্চপান্ডব’ খ্যাত সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের কাউকে ছাড়াই। কিন্তু সেই ম্যাচেই হলো ভরাডুবি। আরো একটা জিনিস পরিস্কার করে দেখিয়ে দিল, মিডল অর্ডারে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর প্রস্থানে তৈরি হওয়া শূন্যতাও খুব দ্রত পূরণ হচ্ছে না।  

এই তিন জন যতদিন খেলেছেন, বিশেষত ওয়ানডের মিডল অর্ডার নিয়ে আলাদা চিন্তা করতে হয়নি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর মাহমুদউল্লাহ অবসর নিয়েছেন, মুশফিক খেলছেন শুধু টেস্টে। সাকিব অবসরের ঘোষণা না দিলেও ওয়ানডেতে ব্রাত্য দীর্ঘদিন। তাদের রেখে যাওয়া তিনটা ব্যাটিং পজিশনে নতুন করে ভাবা হচ্ছে লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজকে। ব্র্যান্ড নিউ এই মিডল অর্ডার প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই ব্যর্থ। হ্যাঁ, সাকিব-মুশফিকদের জায়গা রাতারাতি দখল করতে পারবেন না, সেটা জানা কথাই। তবে এতদিন জাতীয় দলে খেলার পরও লিটন-হৃদয়রা যেভাবে দিকভ্রান্ত হয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন, সেটা নিয়েই যত আলোচনা। 

লিটন ন্যাচারাল ওপেনার। তবে টিম কম্বিনেশনের কারণে প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাট করেছেন চার নম্বরে। যে পজিশনে আগে ৫ ইনিংসে ব্যাট করে ৮১ রান তার নামের পাশে। ষষ্ঠবার নাম্বার ফোরে নেমে ফিরেছেন শূন্যতে। হাসারাঙ্গার হাত থেকে বের হওয়া গুগলিটা পড়তে পারেননি, ফলাফল এলবিডব্লিউ। আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউতে বিদায় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর ওয়ানডে দলে ফেরা লিটনের। 

হাসারাঙ্গার গুগলি, আউট লিটন। ছবি: সংগৃহীত

যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে লিটনের জায়গা হয়নি, সেই টুর্নামেন্টেই ভারতের বিপক্ষে পাঁচ নম্বরে নেমে করেছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। এর আগে ওয়ানডে অভিষেকেও ব্যাট করেছেন একই পজিশনে। সাত ফিফটির তিনটিই পাঁচে নেমে। এছাড়া ব্যাটিংয়ের ধরন, ইনিংস আগলে রাখার দায়িত্বটা মুশফিক-মাহমুদউল্লাহপর মতো পালন করেছেন বলেই মিডল অর্ডারের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে তাকে ভাবা হচ্ছিল, টিম ম্যানেজমেন্টও তাকে সেভাবেই খেলাচ্ছে। কিন্তু কামিন্দু মেন্ডিসের আর্ম বলে বোল্ড হওয়ার সময় তার ব্যাট আর প্যাডের মাঝে যে পরিমাণ ফাঁকা ছিল, তাতে তার ক্রিকেটের সাধারণ জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন উঠেই যায়। 

জাকেরের একার লড়াই শেষে। ছবি: সংগৃহীত

অধিনায়ক মিরাজও যে খুব দুর্দান্ত বলে আউট হয়েছেন এমনটাও নয়। হাসারাঙ্গার গুগলিটা ধরতে পারেননি একেবারেই। পারলে অন্তত ক্রিজের এক্রস গিয়ে খেলতে চাইতে না। অথচ হাসারাঙ্গা ওভারে ছয় বলের মধ্যে অন্তত দুটো গুগলি মারেনই। প্রযুক্তি-অ্যানালাইসিসের এই যুগে এসব নিশ্চয়ই অজানা নয় কারো। তবুও মিরাজ ব্যর্থ, ওয়ানডে অধিনায়কত্বের পূর্ণকালীন দায়িত্ব শুরু হলো ডাক দিয়ে। 

ব্যাটিং ব্যর্থতার ইনিংসে একমাত্র ব্যতিক্রম জাকের আলী অনিক। তিন ফরম্যাটের জন্য নিজেকে অপরিহার্য করে তোলা এই ব্যাটার টেইলএন্ডারদের নিয়ে চালিয়ে গেছেন শেষের বৃথা লড়াই। একটা ফিফটি পেয়েছেন, তবে সেটা কেবল হারের ব্যবধানটাই যা একটু কমিয়েছে। সাথে বাড়িয়েছে মিডল অর্ডার থেকে কেউ একজন না থাকার আফসোস। হাতে এক উইকেট রেখেও সাতে নামা জাকের যেভাবে ব্যাট চালাচ্ছিলেন, তাতে করে বলা যায়, লিটন-মিরাজ-হৃদয়দের অন্তত কেউ একজন থাকলে ম্যাচের চিত্র ভিন্নও হতে পারত। হারের ব্যবধানটা মনে করিয়ে দিই আরেকবার, ৭৭ রান। ইনিংসের বল বাকি ছিল ৮৩ বল।

সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা যে পথটা দেখিয়ে গেছেন, সেই পথে হাঁটতে হয়তো আরো কিছু সময় লাগবে বাংলাদেশের নতুন মিডল অর্ডারের। দ্রুত দুই-তিনটা উইকেট হারানোর মাশুল হয়তো ম্যাচ হেরে দিতে হতে পারে। সাকিব-মুশফিকদের কার্বন কপি লিটন-হৃদয়রা হোন, সেই আশাও কেউ করে না। তবে লিটনের ঠান্ডা মাথার ব্যাটিং, হৃদয়ের সাহস, জাকেরের যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে ফিনিশিং টাচ দেয়ার চিত্রগুলো যেন নিয়মিত হয়, সেটাই দলের চাওয়া। আপাতত এই কজনই সম্ভাব্য সেরা অপশন। ভরসা তাই রাখতেই হচ্ছে! 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *