গোপালগঞ্জে ‘গণগ্রেপ্তার’ আতঙ্ক, কারফিউয়ে চলছে ধরপাকড়

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
গোপালগঞ্জে এনসিপির সভাস্থলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ভাঙচুর চালায় ও অগ্নি সংযোগ করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। ফাইল ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

গোপালগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ‘গণগ্রেপ্তার’ আতঙ্কে স্থানীয় অনেকে এলাকা ছাড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘গণগ্রেপ্তার’ এড়াতে গা ঢাকা দেওয়ায় জেলার পাঁচটি উপজেলা শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো এখন প্রায় পুরুষশূন্য। অনেকেই দক্ষিণাঞ্চলের আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ কেউ রাজধানীতেও পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গোপালগঞ্জে যৌথ বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার জেরে যৌথ বাহিনীর গুলিতে পাঁচ জন নিহতের পর, বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ পর্যন্ত জেলা সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় দায়ের হওয়া চারটি মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অন্তত ৩০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসব মামলায় তিন হাজার আট জনকে করা হয়েছে আসামি, যাদের মধ্যে নাম উল্লেখ রয়েছে ৩৫৮ জনের। অভিযুক্ত ৩৫৮ জনের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি সজেদুর রহমান জানান, এসব মামলায় বুধবারের  সহিংসতায়  নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদরে কারফিউয়ে সেনা টহল। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

শুক্রবার রাতে দায়ের হওয়া সর্বশেষ মামলায় ৫৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৩৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এ মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৪ জনকে।

এদিকে, বুধবার রক্তক্ষয়ী সহিংসতার পরদিন ১৪৪ ধারা জারি ও কারফিউ দেওয়া হয়, যা রোববার সকাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘গণগ্রেপ্তার’ আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নির্দোষ অনেকে। অপরাধীরা এলাকা ছাড়লেও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে ধরা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, তার দিনমজুর স্বামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও দুই দিন ধরে বাড়ি ফিরছেন না। অন্যদিকে কৃষিকাজে যুক্ত এক প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কে নদী পেরিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন নাসির হাওলাদার নামে এক দিনমজুর।

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান) রুহুল আমিন সরকার দাবি করেছেন, ‘শুধুমাত্র মামলার এজাহারভুক্তদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নিরীহদের হয়রানির প্রশ্নই আসে না।’

গোপালগঞ্জের সহিংসতায় নিহত রমজানের বাবা-মার আহাজারি। ছবি: অনিক রহমান/টাইমস

পাঁচ থানার তথ্য অনুযায়ী, সদর থানায় ৯২, কাশিয়ানীতে ৭৭, মুকসুদপুরে ৮৮, টুঙ্গিপাড়ায় ২৭ এবং কোটালীপাড়ায় ২২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এদিকে বুধবার পুলিশের গুলিতে নিহত চারজনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন নিয়ে সমালোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, প্রয়োজনে মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হবে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠন নির্বিচার গ্রেপ্তার বন্ধ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *