ক্যান্ডিতে ইতিহাসের দুয়ারে বাংলাদেশ

টাইমস স্পোর্টস
6 Min Read
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে আগামীকাল মাঠে নামছে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা। ছবি: শ্রীলংকা ক্রিকেট

শ্রীলংকা সফরে গিয়ে বাংলাদেশ দল ঘুরে বেড়াচ্ছে ভারত মহাসাগর ঘেঁষা এক উপকূলীয় এলাকা থেকে অন্যত্র। লংকার দক্ষিণ উপকূলের ঐতিহাসিক গলে শুরু টেস্ট সিরিজ। ব্যক্তিগত কিছু মাইলফলকের দেখা পেলেও লাল বলের ক্রিকেটে মাঠের দলীয় পারফরম্যান্সে ছিল ডূবি ডুবি দশা। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের ঠিকানা ছিল পশ্চিম উপকূলের বন্দরনগরী কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। যে মাঠ বাংলাদেশের কাছে এলো উত্তাল সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস হয়ে। 

প্রথম ওয়ানডেতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তলিয়ে গেল ব্যাটিং অর্ডার। পরের ম্যাচটা জিতে মিরাজরা অবশ্য জানান দিয়েছেন, বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের ঝাঁপটা লাগলেও টিকে আছেন তারা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এখন ১-১ সমতায়। সাগরপাড়ের লড়াই শেষে মিরাজদের সামনে এখন ক্যান্ডি শহরের পাহাড় জয়ের চ্যালেঞ্জ। সোমবারের যে চড়াইটা টপকে গেলে প্রথমবারের মতো শ্রীলংকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। 

তিন ম্যাচ সিরিজের অঘোষিত ফাইনালে রুপ নেয়া শেষ ওয়ানডের ভেন্যু পাহাড়ের কোল ঘেঁষা ক্যান্ডি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬৪০ ফুট উঁচু এই শহরে প্রায় সারাবছরই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। বাংলাদেশ দলও প্রায় দুই বছর পর ফিরেছে ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে। যেখানে সর্বশেষ দেখায় শ্রীলংকার কাছে হারতে হয়েছে এশিয়া কাপে। এর আগে ওয়ানডেতে অবশ্য সুখস্মৃতি আছে দলের, ২০১৩ সালে লংকানদের ডি/এল মেথডে ৩ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

সেই ম্যাচের একাদশে থাকা কোনো ক্রিকেটারই এখন নেই বাংলাদেশের ওয়ানডে সার্কিটে। টেস্ট খেলছেন কেবল মুশফিকুর রহিম আর মুমিনুল হক। তরুণ এনামুল হক বিজয় অবশ্য চলতি সফরে টেস্ট খেলেছেন দুটো। তবে সর্বশেষ দেখার এশিয়া কাপের ম্যাচের অনেকেই আছেন এবারের লংকা সফরের ওয়ানডে দলে। নাঈম শেখ, তানজিদ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজরা থাকলেও নেই মুশফিকুর রহিম-সাকিব আল হাসানরা।

পাহাড় ঘেরা ক্যান্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়াম। ছবি: সংগৃহীত

১৬৪ রানের পুঁজি নিয়ে ৫ উইকেটে হারা সেই ম্যাচে বল হাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ইকোনমিক্যাল ছিলেন সাকিব। ১০ ওভারে দুই মেইডেন-সহ মাত্র ২৯ রানে নেন দুই উইকেট। এক ম্যাচে আগেই সাকিবের মতো দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম। বাঁচা-মরার ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল ১০-২-৩-৫। হ্যাঁ, সাকিবের রেখে যাওয়া জায়গাটা পূরণ করতে তানভীরকে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ একটা পথ। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরো অনেকদিন, স্বস্তি খুঁজতে পারে দল এই ভেবে, ‘অন্তত প্রক্রিয়াটা তো শুরু হলো…’

কলম্বোতে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম জয় পেয়েছেন মিরাজ, সুযোগ এবার সিরিজ জয়ের; তাও দেশের বাইরে। প্রথম ম্যাচে ৫ রানে ৭ উইকেটে হারানোর ধাক্কা থেকে দল দারুণ কামব্যাক করেছে নিঃসন্দেহে। তাদের শরীরী ভাষা, শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাওয়ার ইচ্ছা সবই দেখা গেছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। নইলে জানিথ লিয়ানাগে যেভাবে ব্যাট করছিলেন, অতীত ইতিহাস বলে এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পা হড়কায়। এবার হড়কায়নি মোস্তাফিজুর রহমানের কল্যাণে। 

অথচ পুরো ইনিংসজুড়ে তাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি সেভাবে। প্রথম ওভারে টানা চারটি বাউন্ডারি জুটল কুশাল মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। দিলেন ১৭ রান। ৬ ওভার শেষে ৪৮ রান দিয়ে উইকেটহীন। ফিল্ডিংয়েও ছিলেন ছন্নছাড়া। শেষদিকে সপ্তম ওভারে এসে করলেন মেইডেন। অষ্টম ওভার লিয়ানাগের কাছে ছক্কা খেয়ে শুরু করলেও এক বল পরেই স্লোয়ার বাউন্সারে নেন লিয়ানাগের ফিরতি ক্যাচ। কারণ এক ম্যাচ আগে বাংলাদেশের সিরিজ হারার সম্ভাবনার প্রশ্নে শ্রীলংকার উত্তর ছিলেন এই ৮৫ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলা এই ডানহাতি ব্যাটারই। 

আরো একটা স্বস্তির খবর, পাঁচ ম্যাচ পর উইকেট পেয়েছেন মিরাজ। ১০ ওভারে ৩৭ দিয়ে নিয়েছেন হাসারাঙ্গার উইকেট। তবে বোলিং ফিগারের চেয়ে ম্যাচে তার প্রভাব কতখানি ছিল, সেদিকে নজর দেয়াই শ্রেয়। মিডল ওভারে ৩৫টিই দিয়েছেন ডট। আরেক পার্ট টাইম অফ স্পিনার শামীম পাটোয়ারীকে খেলতেই যেন  হিমশিম খাচ্ছিলেন লংকান ব্যাটাররা। ৯ ওভার বল করে আদায় করেছেন ৩৫ ডট, ২২ রান খরচায় ১ উইকেট পকেটে। দুজন জুটি বেধে বল করে যেভাবে আটকে রেখেছিলেন শ্রীলংকাকে, এতে বেড়েছে রান রেটের চাপ। 

পাল্লেকেলের উইকেট স্কোরিং হলেও পেসারদের জন্য কিছু সুবিধা দেয়ই। নতুন বলে সুইং-সিম মুভমেন্টের আশা করতেই পারেন তাসকিন আহমেদ-তানজিম হাসান সাকিবরা। মিডল ওভারে আবারও হিরো হওয়ার সুযোগ থাকবে মিরাজ-তানভীরদের, যদি উইকেট কিছুটা শুকনো থাকে। অবশ্য ফ্লাডলাইটের আলোতে হতে যাওয়া এই ম্যাচে বৃষ্টির শংকাও আছে। এই মাঠের সর্বশেষ পাঁচ ওয়ানডেতেই ছিল বৃষ্টির বাগড়া।

তবে ম্যাচের টোন সেট করে দেয়ার দায়িত্বের পুরোটাই ব্যাটারদের। গত তিন বছরের হিসেবে প্রথম ইনিংসে গড়ে রান উঠেছে ২৫০ করে। অবশ্য ৩০০ ছাড়ানো ইনিংসও আছে ১৫টি। টসও একটা বড় ফ্যাক্টর ক্যান্ডির এই মাঠে। কারণ ডে-নাইট ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা দলই জিতেছে সবচেয়ে বেশি ২৪টি ম্যাচে। আগের ম্যাচে টস জিতেছেন মিরাজ, পাল্লেকেলের চেজিং থিওরি মাথায় রাখলে মিরাজও চাইবেন টস ভাগ্যটা আবার পক্ষে আসুক। 

পারভেজ হোসেন ইমন দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি পেয়েছেন, তাকে সরিয়ে নাঈম শেখকে খেলাবে না হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট। একই ম্যাচে মিডল অর্ডারে দেখেশুনে খেলেছেন তাওহিদ হৃদয়। ওপেনার তানজিদ তামিম সেই ম্যাচে রান না পেলেও ব্যাটিং ধসের প্রথম ওয়ানডেতে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। তার দিকেও তাকিয়ে থাকবে দল। প্রথম দুই ম্যাচেই সেট হয়ে আউট হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক শান্ত, মিরাজের ব্যাটেও আসেনি বড় রান। তাই ক্যান্ডিতে ইতিহাস গড়তে ইমন-শান্তদের ব্যাটে ভর দিয়েই শেষ চূড়াটা টপকে যেতে চাইবে বাংলাদেশ। 

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *