বাড়ির উঠানে কাঠের চৌকি। তার উপরে লাল চাদরে ঢাকা রয়েছে সরকারি চাকরিজীবী জাহিদুল ইসলাম (৪৫) ও তার ছেলে জিহাদের (৯) মরদেহ। সেখানে আহাজারি করছেন শোকে মাতম শিলু খাতুন। তাদের ঘিরে রয়েছেন উৎসুক জনতা ও স্বজনরা। তারা শিলুকে শান্ত্বনা দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের জংগলী গ্রামের স্কুলপাড়ায় সরেজমিন গিয়ে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য চোখে পড়ে। এর আগে বিকালে মরা কালিগঙ্গা নদী থেকে জাহিদুল ও জিহাদের মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
জাহিদুল ওই এলাকার রফি মণ্ডলের ছেলে ও কুষ্টিয়া পল্লী ও দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের কর্মচারী এবং তার ছেলে জিহাদ জংগলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
জানা গেছে, জাহিদুল সরকারি চাকুরির পাশাপাশি চাষাবাদ করেন। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে ছেলে জিহাদকে নিয়ে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দিতে গিয়েছিলেন জাহিদুল। পাট জাগ দেওয়া শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে ছেলেকে কাঁধে নিয়ে নদীর মাঝ থেকে তীরে ফিরছিলেন। হঠাৎ জাহিদুল পানিতে ডুবে যান। এরপর ছেলে জিহাদ তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে সেও ডুবে যায়। বিষয়টি নদীর তীরে থাকা স্থানীয় ফয়জুল হক (৬৫) টের পেয়ে স্থানীয়দের খবর দেন।
পরে এলাকাবাসী প্রায় দেড় ঘণ্টা নদীতে খোঁজাখুঁজি করে প্রথমে ছেলে জিহাদ এবং পরে একই স্থান থেকে তার বাবা জাহিদুলের লাশ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ফয়জুল হক বলেন, পাট জাগ দেওয়া শেষে জাহিদুল তার ছেলেকে কাঁধে নিয়ে ফিরছিলেন। হঠাৎ প্রথমে বাবা এবং পরে ছেলে পানিতে ডুবে যায়। ডুবতে দেখে দ্রুত স্থানীয়দের খবর দিই।
নিহত জাহিদুল ইসলামের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়িতে খাচ্ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত নদীতে গিয়ে দেখি শত শত মানুষ। সবাই উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। পরে ৪টার দিকে বাপ বেটার লাশ পাওয়া যায়। তার ভাষ্য, পাট জাগ দেওয়ার জন্য জাহিদুল ছুটিতে ছিলেন। বাপ বেটা দুজনেই সাঁতার জানত।
নদীতে ডুবে বাবা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম তুষার।
কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্দ্র প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, ‘নদীতে পাট জাগ দিতে গিয়ে বাবা ও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আমরা পৌঁছানোর আগেই গ্রামবাসী মরদেহ উদ্ধার করেছে।’
কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক বিল্লাল হোসেন খাঁন বলেন, ‘পানিতে ডুবে বাবা ও ছেলের মৃত্যুর খবর প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।’