আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়, আবারও বড় ব্যবধানে হার। লাহোরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের কাছে ৫৭ রানে হারল বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল স্বাগতিকরা।
২০২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কখনই ম্যাচে ছিল না বাংলাদেশ। ইনিংস শেষ হয় ৯ উইকেটে ১৪৪ রানে। সবচেয়ে বেশি লড়াইটা এসেছে ৯ নম্বরে নামা পেসার তানজিম হাসান সাকিবের ব্যাট থেকে, ৩১ বলে ৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
শরিফুল ইসলাম ইনজুরির কারণে ব্যাটই করতে পারেননি। ওপেনার তানজিদ তামিম শুরুটা ভালো করলেও, আগের ম্যাচের মতোই উইকেট ছুড়ে দিয়ে ফিরেছেন। ৩৩ রান করেছেন মাত্র ১৯ বলে। মেহেদি মিরাজ করেছেন ২৩, বাকিরা সবাই এক অঙ্কেই থেমে গেছেন।
পাকিস্তানের বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত। লেগস্পিনার আবরার আহমেদ ৩ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ১৯ রানে—টি-টোয়েন্টিতে যা তার ক্যারিয়ার সেরা। সহায়তা পেয়েছেন মোহাম্মদ আমির ও আব্বাস আফ্রিদির কাছ থেকে।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান তোলে ৬ উইকেটে ২০১ রান। সাহিবজাদা ফারহান ঝড় তোলেন ৭৪ রানে, ৪১ বলে। ছয় ছক্কা ও চারটি চারে সাজানো ইনিংসটি ছিল তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা। তার সঙ্গে ৫৪ বলে ১০৩ রানের জুটি গড়েন মোহাম্মদ হারিস (৪১)। শেষের দিকে হাসান নবাজ ঝড় তোলেন ২৬ বলে ৫১* রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ২ উইকেট নিয়েছেন ৩৬ রানে। হাসান মাহমুদও ২ উইকেট পেলেও দিয়েছেন ৪৭ রান। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন রিশাদ হোসেন—এক উইকেট নিতে গিয়ে দিয়েছেন ৫০ রান।
দ্বিতীয় ম্যাচেও ২০০+ রান তাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেও পাকিস্তান করেছিল ঠিক ২০১, সেদিন হেরেছিল ৩৭ রানে। এখন সিরিজ হেরে যাওয়ায় শেষ ম্যাচটা হয়ে দাঁড়াল কেবল আনুষ্ঠানিকতা।
তথ্য বলছে ভিন্ন কথা
ম্যাচ শেষে পেসার তানজিম সাকিব বললেন, “আমরা সবাই প্রমাণিত খেলোয়াড়। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক—দুই জায়গাতেই আমরা নিজেকে প্রমাণ করেছি।” তবে পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা।
তানজিদ তামিম বারবার ভালো শুরু পেলেও তা বড় রানে রূপ দিতে পারছেন না। শেষ চার ইনিংসেই করেছেন ৫৯, ৪০, ৩১, ৩৩—কিন্তু ম্যাচ জিততে পারেননি। শুরুটা দিচ্ছেন, কিন্তু শেষটা নয়।
এমনই অনিয়মিততা দেখা যাচ্ছে পারভেজ ইমন, লিটন দাস, হৃদয়, জাকের আলীর ব্যাটেও। কেউ কেউ এক-আধটা ইনিংস ভালো খেলেছেন, কিন্তু ধারাবাহিকতা নেই কারও খেলায়। বিশেষ করে ‘ফিনিশার’ জাকেরের স্ট্রাইক রেটও আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।
এমন পারফরম্যান্সে সাকিবের “প্রমাণিত খেলোয়াড়” মন্তব্যে উঠেছে প্রশ্ন। শুধু এক-আধটা ইনিংস নয়, আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়দের বিচার হয় ধারাবাহিকতায়—যেটা এই ব্যাটারদের মাঝে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
গভীর সমস্যার ইঙ্গিত
অধিনায়ক লিটন দাস নিজেও ম্যাচ শেষে মেনে নিয়েছেন, দলটা মৌলিক ভুলে ভুগছে। “পরপর উইকেট পড়লে রান আসে না,” বলে দিয়েছেন তিনি।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ শুধু খারাপ সময় পার করছে না, বরং প্রতিপক্ষের কাছে বারবার ধরাশায়ী হচ্ছে। ব্যাটিং ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা আর জুটির অভাবে বারবার ভেঙে পড়ছে দল।
সিরিজের শেষ ম্যাচে মান বাঁচানোর চেষ্টা হয়তো থাকবে, কিন্তু ‘প্রুভেন প্লেয়ার’ উপাধির সত্যতা প্রমাণ করতে হলে নামের পাশে যোগ করতে হবে পারফরম্যান্সও—তা যত দ্রুত সম্ভব।