পৌর করবস্থানের নির্জনে প্রাচীন গাছ-পালার প্রাচুর্যে ফের দেখা মিলছে বিলুপ্তপ্রায় ফলখেকো বাদুড়ের। কয়েকবছরে ঝিনাইদহে দেশি-বিদেশি ফলমূলের প্রাচুর্যে ‘পরিবেশের উপকারী’ এই বন্যপ্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
কবরস্থানের বড় বড় গাছপালায় উল্টো হয়ে ঝুলে থাকা অসংখ্য বড় প্রজাতির এই ‘ফ্রুট ব্যাট’ এরই মধ্যে সাধারণ দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করেছে তো বটেই, বন কর্মকর্তারাও এসব বন্যপ্রাণী রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদশক আগেও গাছপালা ও বনজঙ্গলের প্রাচুর্যে এ অঞ্চলটি ছিল বন্য শুকর, সজারু, ভোঁদড়, মেছো বিড়াল, খরগোশ, শকুন, সরাইলসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী ও পাখপাখালির ‘অঘোষিত অভয়ারণ্য’।
তবে সেসবই এখন অতীত ইতিহাস। জনসংখ্যার চাপে, আবাদি জমি তৈরি করতে দিন দিন গাছপালা উজাড় হওয়ার সাথে সাথে আবাসস্থল হারিয়ে বিলুপ্তির মুখে পড়েছে এসব জীববৈচিত্র্য।
এমন বৈরী পরিস্থিতিতেও কয়েক হাজার ফলখেকো বাদুড় দিনমান গাছে গাছে ঝুলে থেকে সন্ধ্যা ঘনালে যখন খাবারের সন্ধানে বের হয়, তখন কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে রাখে বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
বন্যপ্রাণী বিশারদরা বলছেন, এই প্রজাতির বাদুড়ের প্রধান খাবার ফলমূল। এরা দলবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, বিশেষত মশা- এদের পছন্দের খাবার। কলা, আম, লিচুসহ বিভিন্ন ফলের পরাগায়নেও ভূমিকা রাখে এই ‘ফ্রুট ব্যাট’।
কবরস্থানের সেবক নাইম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রায় দুই বছর হলো বাদুড়গুলো এখানে থাকতে শুরু করেছে। কোথায় থেকে এসেছে, কেউ জানে না। সারাদিন এভাবে কিচিরমিচির করে, ওড়াউড়ি করে। রাতে ঝাঁক ধরে কোথায় যেন চলে যায়।’
‘কবরস্থানের এসব বাদুড় নিয়ে অনেকে কৌতুহলী হয়। তবে এরা কাউকে আক্রমণ করে না’, যোগ করেন তিনি।
প্রকৃতিবিদ আব্দুল্লাহ মারুফ বলেন, ‘এসব বাদুড় ২০-২৫ বছর আগেও ঝিনাইদহে ছিল বিরল। এখন প্রকৃতিতে এদের ফিরে আসা নিঃসন্দেহে ভালো খবর।’
‘শিকারীদের রোধ করা গেলে এরা আবার আমাদের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হবে,’ মনে করেন মারুফ।
জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, “ফ্রুট ব্যাট” বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এরা আমাদের ইকো সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পরিবেশের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে এরা ভারসাম্য রক্ষা করে।’
তিনি জানান, ফলের বাগানে বাদুড়ের উৎপাত ঠেকাতে অনেকেই কারেন্ট জাল ব্যবহার করেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।
জাকির হোসেন বলেন, ‘জাল দিয়ে ফ্রুট ব্যাটসহ অনেক বন্যপ্রাণী শিকারের কারণে এরা প্রকৃতি থেকে হারাতে বসেছে।’
এ ধরনের অপরাধকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।