হামলা আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতায় গঙ্গাচড়ার জনপদ

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ২৭ জুলাই দুর্বৃত্তরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হামলা আতঙ্কে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে একাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবার।

সরেজমিন দেখা যায়, বেতগাড়ী ইউনিয়নের গ্রামটির সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নিরাপত্তার অভাবে অসহায় বোধ করছেন। সনাতন পাড়ার অনেক পরিবার তাদের ঘরের মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন নিরাপদে। ইতোমধ্যে কিছু সনাতন পরিবার এলাকা ছেড়ে গেছেন। যারা এখনো এলাকায় আছেন তারাও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি বাড়ি থেকে সব সরিয়ে পাশের গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারেননি। খাওয়া-দাওয়া হয়নি। কী হবে বুঝতেও পারছেন না।

এক নারীকে ভ্যানে করে দুটি ছাগল ও কিছু ঘরোয়া মালপত্র অন্যত্র পাঠাতে দেখা যায়। হামলার শঙ্কায় উদ্বিগ্ন কণ্ঠে তিনি আগেভাগে মালপত্রগুলো বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার কথা জানান।

এদিকে, এলাকার শিক্ষা কার্যক্রমেও হামলার ঘটনার প্রভাব পড়েছে। ঘটনার পরদিন আলদাদপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের দেখা মেলেনি। আতঙ্কে অনেক পরিবারই সন্তানদের স্কুলে পাঠায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

এর আগে, ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ এনে রোববার উপজেলার আলদাদপুর গ্রামের ১৪ থেকে ১৫টি সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়িতে ব্যাপক হামলা-লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। এদিন রাতে জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতি ও লুটপাটের একটি তালিকা করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক বা অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে কাজ করার কথা জানান তিনি।

মহানবীকে (দ.) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগ তুলে রোববার গঙ্গাচড়া এবং পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

পরে বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় বাজারে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে আলদাদপুর গ্রামে যায়। মিছিল থেকে গ্রামের সনাতনীদের অন্তত ১৪ থেকে ১৫টি বাড়িতে ব্যাপক হামলা-লুটপাট চালানো হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র রায় জানান, সোমবার দুপুরে নামাজের পরেও আবার হামলার হুমকি পাওয়া যাচ্ছিল বলে আতঙ্কিত হয়ে অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান জানান, পরিস্থিতি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে হামলার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি এবং কাউকে আটকও করা হয়নি।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, রোববারের ঘটনার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের মাগুরা ইউনিয়নের কিছু মানুষ জড়িতের তথ্য রয়েছে। আবার হামলা না হওয়ার জন্য খিলালগঞ্জ বাজারে এখনো সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়ন আছে।

ফেসবুকে কটূক্তিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে রঞ্জন রায় নামে এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে গঙ্গাচড়া মডেল থানা পুলিশ। অভিযুক্ত কিশোরের বাড়িতেও শনিবার সন্ধ্যায় ভাঙচুর চালানো হয়।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *