রুপালি গিটারে গাঁথা কিংবদন্তির গল্প

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
আইয়ুব বাচ্চু। ছবি: সংগৃহীত

কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু চলে তার প্রিয় ‘রুপালী গিটার’ ফেলে আজ মহাকাশে। বেঁচে থাকলে তার বয়স ৬৩ পূর্ণ হত। হাসি-খুশি মানুষটি হয়ত প্রিয়জনদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটতেন। কিন্তু ২০১৮ সালেই তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাই ক্যালেন্ডার ঘুরে ১৬ আগস্ট এলেই যেন বিষাদের সুরটা ফের বেজে ওঠে।

তার জন্মদিনে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আইয়ুব বাচ্চু ফাউন্ডেশন। জানা গেছে, অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের সদস্যরা, এলআরবি ব্যান্ডের সদস্যরা এবং তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সহকর্মীরা। ‘আইয়ুব বাচ্চু: সেলিব্রেটিং লাইফ, লিগেসি অ্যান্ড চলো বদলে যাই’ শীর্ষক এ আয়োজনে শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করবেন গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, সুরকার ফোয়াদ নাসের বাবু, সংগীতশিল্পী নকীব খান, পার্থ বড়ুয়া, বাপ্পা মজুমদারসহ অনেকে।

শুধু আলোচনা নয়, এখনকার প্রজন্মের শিল্পীরাও গেয়ে শোনাবেন আইয়ুব বাচ্চুর কালজয়ী গান। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে তার অপ্রকাশিত কিছু গান প্রকাশের পরিকল্পনাও রয়েছে।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। পরিবারের অমত থাকলেও ব্যান্ডের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায় একেবারে শৈশবেই। ছেলের এমন আগ্রহ দেখে ১১তম জন্মদিনে বাবা একটি গিটার কিনে দেন। কিন্তু তখন কি আর কেউ কল্পনা করেছে, এই এগারোর কিশোর একদিন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় গিটারিস্ট ও ব্যান্ড তারকা হয়ে উঠবেন।

কলেজ জীবনে ওঠার পরই বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রথমে এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে অবশ্য নাম বদলে ‘আগলি বয়েজ’ রাখেন। এই ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। আর গিটারিস্ট ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তারা স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতেন। ১৯৭৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন এবি।

সেখানে তিনি জেমসের সঙ্গে বাজিয়েছিলেন। তবে আইয়ুব বাচ্চুর উত্থানের সূচনা মূলত ১৯৮০ সালে ‘সোলস’-এ যোগদানের পর। এই ব্যান্ডের হয়ে দশ বছর পারফর্ম করেছিলেন তিনি। অতপর ভাবলেন, নিজে কিছু করা যাক। সেই ভাবনা থেকে ১৯৯০ সালে গড়ে তোলেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। যা পরবর্তীতে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ বা ‘এলআরবি’ নামে বিপুল খ্যাতি লাভ করে।

ব্যান্ডের হয়ে আইয়ুব বাচ্চু উপহার দিয়েছেন এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮) এবং যুদ্ধ (২০১২) অ্যালবামগুলো।  এছাড়া একক শিল্পী হিসেবে তার অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে- রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এর বাইরে তার গাওয়া গানের অসংখ্য মিক্সড অ্যালবাম রয়েছে।

আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে ‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘মেয়ে’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘রুপালি গিটার’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘একচালা টিনের ঘর’, ‘তারাভরা রাতে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসে’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘আম্মাজান’, ‘ফেরারি মন’ ইত্যাদি।

নন্দিত এই শিল্পীর শ্রদ্ধায় তার জন্মশহর চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে একটি গিটার ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ‘রূপালি গিটার’ নামের সেই ভাস্কর্য মাথা উঁচিয়ে এই কিংবদন্তির অবদানের কথা জানান দেয় বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষকে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *