ফেনী জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও সংকট এখনও কাটেনি। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন হাজারো মানুষ, তবে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন ধরনের বিপদ। সাপের উপদ্রবের পাশাপাশি শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে দেখা দিয়েছে ভোগান্তি।
বন্যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল ডুবে যাওয়ায় পানিতে ভেসে এখন ঘরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে নানা প্রজাতির সাপ।
জেলায় আড়াইশ শয্যার সদর হাসপাতালে দেখে গেছে, সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন ছাগলনাইয়া উপজেলায় সাপের ছোবলে আহত এক নারী। তিনি জানান, রান্নঘরে বিষধর সাপ কামড়েছে তাকে। এছাড়া বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে ফুলগাজী উপজেলায় আরেক শিশু সাপের কামড়ে আহত হয়েছে।
‘অনেকে মনে করেন পানি নামলেই বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু প্রকৃত সংকট এখন শুরু হচ্ছে, বললেন এক স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী।
‘সাপে কাটা রোগী বাড়ছে, আর স্বাস্থ্য পরিস্থিতিও দ্রুত খারাপ হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
বিশুদ্ধ পানির অভাবে ফেনীর অনেক এলাকায় চর্মরোগ, ছত্রাকজনিত সমস্যা, ডায়রিয়া ও আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বন্যার পানিই ব্যবহার করছেন রান্না ও খাবার হিসেবে।
এমন চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার রোগীও বাড়ছে জেলায় আড়াইশ শয্যার সদর হাসপাতালে।

চিকিৎসকেরা সবাইকে সতর্ক করে বলছেন, ফুটিয়ে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার, রাবারের জুতা পরা, জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং ঘরে ঢোকার আগে ভালোভাবে সাপখোপ পরীক্ষা করলে
অনেক বিপদ এড়ানো সম্ভব।
পাশাপাশি তারা স্থানীয় প্রশাসন, মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
মৌসুমী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে প্লাবিত হয় পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে অন্তত ৩৪ হাজার ৬০০ মানুষ। ক্ষণস্থায়ী বাঁধের কমপক্ষে ২৩টি স্থান ভাঙনে প্লাবিত হয় ১১২টি গ্রাম। বিদ্যুৎ সংযোগ, নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় অশেষ ভোগান্তিতে পড়েন বন্যার্তরা।
স্থানীয়রা জানান, এখন ধীরে ধীরে পানি নামার পর, পরিষ্কার হয়ে উঠছে বন্যার ক্ষতির চিত্র। পরশুরামে পানিতে ধসে পড়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ফুলগাজীতে রোপা আমন ধান পানিতে পচে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজারো কৃষক।
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা। এসব অঞ্চলে দূর্গত অনেকে জীবিকা হারিয়ে, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বেগে রয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও ওরস্যালাইন দেওয়া হলেও দুর্গতদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল।