ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত নেই বলে দাবি করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও বলেন, ‘এই হামলা ইসরায়েলের একক সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্র এতে অংশ নেয়নি, তবে এ বিষয়ে আমরা অবহিত ছিলাম।’
রুবিও বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’ ইসরায়েল আত্মরক্ষার্থে ইরানের পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সংস্থা এপি জানায়, ইরানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বা নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু না করে-এটি আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই।’
অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি ইসরায়েলকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হতো। তবে ইসরায়েল ইরানের পাল্টা হামলার মুখে পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে, তা স্পষ্ট করেননি রুবিও।
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরানের প্রতিক্রিয়ায় বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
দেশটির রিপাবলিকান সিনেট-সদস্যদের তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তবে ইরানের পাল্টা হামলা বড় ধরনের প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, গত সপ্তাহে একটি গোপন বৈঠকে উইটকফ জানিয়েছিলেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশটিতে সামরিক হামলার চালাতে পারে ইসরায়েল।
বৈঠকে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা নিয়েও কথা বলেন উইটকফ। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ এটি একসঙ্গে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার ভার নিতে সক্ষম নয়।
এদিকে, ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলের হামলা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।’
তবে তিনি ইসরায়েলকে এই হামলা না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভালো চুক্তির খুব কাছে পৌঁছে গেছি।’
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ইরান কয়েক শ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদেশগুলোর সহায়তায় সেগুলোর বেশিরভাগই প্রতিহত করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল। তার আগে গত বছরের এপ্রিলেও ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। তেহরানে আইআরজিসির সদরদপ্তরেও হামলা হয়েছে। এই হামলার নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন রাইজিং লায়ন। ইসরায়েলের দাবি, হামলায় নাতাঞ্জে অবস্থিত ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীরা তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল।