প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। ছবি: টাইমস

১৮০০ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন প্রায় ২০০ বছর আগের পুরোনো সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। ঐতিহাসিক মসজিদটি স্থানীয়ভাবে ‘মিয়ার মসজিদ’ নামে পরিচিত। মূল নাম ‘খান বাহাদুর কাজী সালামত উল্লাহ জামে মসজিদ’ হলেও বর্তমানে এটি তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ নামেই বেশি পরিচিত।

‘মোগল মনুমেন্টস অব বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মৌলভী কাজী সালামতউল্লাহ খান বাহাদুর নামক তেঁতুলিয়ার একজন ধার্মিক জমিদার ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ শাসনামলের ডেপুটি কালেকটর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। জনশ্রুতি আছে, তিনি আঠারো শতকের দিকে মসজিদটি নির্মাণ করেন। কিন্তু ঠিক কত সালে তিনি মসজিদটি বানিয়েছেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে গ্রন্থে বলা আছে, তিনি ১৮১৮, ১৮২৫ বক ১৮৫৮ থেকে ৫৯ সালের দিকে মসজিদটি নির্মাণ করে থাকতে পারেন।

খুলনা-পাইকগাছা সড়কের কোল ঘেঁষে উপজেলা সদরের দুই থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে আঠারো মাইল অভিমুখে আঞ্চলিক সড়কের পাশে এক একর জায়গাজুড়ে মসজিদটির অবস্থান। মসজিদের উত্তরপাশে প্রায় দুই একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘী রয়েছে। মসজিদ থেকে সিঁড়ি গিয়ে মিশেছে দীঘির তলদেশে। মসজিদটিতে রয়েছে ৭টি দরজা। প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড়বিশিষ্ট ১২টি পিলারের ওপর মসজিদের ছাদ নির্মিত। চুনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ৬টি বড় গম্বুজ এবং ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। এছাড়া ২৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোণে আরো ৪টি মিনার রয়েছে। মসজিদের ভেতরে ৫টি সারিতে ৩২৫ জন ও মসজিদের বাইরের চত্বরে ১৭৫ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর তাদের আয়ত্তে নিয়েছে বলে জানা গেছে।

তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। ছবি : টাইমস

দীর্ঘদিন অযত্ন আর অবহেলায় থাকার পর ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ববিভাগের অধীনে সম্প্রতি কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে। তবে, দ্রুত সম্পূর্ণ সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল। তা না হলে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী ঐতিহাসিক মসজিদটি কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।

মসজিদের সামনে তৈরি একটি প্লেটে লন্ডনপ্রবাসী মন্টি সিদ্দিকী (কাজী সালামতউল্লাহর বংশধর) নামের এক ব্যক্তির দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, মসজিদটির সঙ্গে ১৮৪০ থেকে ৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার শাহজানী বেগম মসজিদ এবং ১৮৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ জোনায়েদ আকবর জানান, ইতিমধ্যে প্রত্নতত্ত্ববিভাগের অধীনে মসজিদটির বেশকিছু সংস্কার কাজসহ রঙের কাজ করা হয়েছে। এখনও সীমানা প্রাচীরসহ বেশ কিছু সংস্কার কাজ বাকি আছে। তিনি এ সময় প্রত্নতত্ত্ববিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাকী কাজগুলো সংস্কারের অনুরোধ জানান।

আপনি চাইলেই ঐতিহাসিক এই মসজিদটি একবার দেখে আসতে পারেন। এজন্য সহজ পথে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের নোয়াপাড়া বাজারে নেমে ভ্যানে করে তিন কিলোমিটার পূর্বদিকে তেঁতুলিয়া বাজার বা সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের আঠারমাইল বাজারে নেমে বাস অথবা ভ্যানে চড়ে চার কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই আপনি গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *